সিলেট শহরকে বলা হয় সুরমা নদীর পারের লন্ডন। টেমসের পারে লন্ডন শহরের মতোই সুরমা নদীর পারে গড়ে উঠেছে সিলেট নগরী। এর কিন ব্রিজ ও আলী আমজদের ঘড়ি লন্ডন টাওয়ার ব্রিজের মতই শুধু মানুষ আর গাড়ি নয়, শহরের পরিচয় বহন করে। গণমানুষের কবি দিলওয়ার তাঁর বিখ্যাত ‘কীনব্রীজের সূর্যোদয়’ কবিতায় বলেছেন কীন ব্রিজের উপর দিয়ে মানুষের চলাচলের মধ্যে দিয়ে দিন শুরু হয় নগরবাসীর। কবির ভাষায়, নীচে জল কলকল বেগবতী নদী সুরমার/ কান পেতে শুনি সেই অপরূপ তটিনীর ভাষাঃ/——- ধারালো বর্শার মতো স্বর্ণময় সূর্যরশ্মির ফলা/ কীন ব্রীজে আঘাত হানে/ শুরু হয় জনতার চলা। হযরত শাহজালাল (রহঃ) ও হযরত শাহপরান (রহঃ) এর দরগাহ এই শহরকে একটি পবিত্র ও আধ্যাত্মিক শহরের মর্যাদা দিয়েছে। যা যুগ যুগ থেকে শান্তি ও সম্প্রীতির সুবাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও সিলেট দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে একটি প্রিয় স্থান। যারা শান্ত পরিবেশ খুঁজেন, তাঁরা শাহজালাল(রহ.) ও শাহপরান(রহ.) এর মাজার অথবা নির্জন প্রকৃতির সান্নিধ্য এই শহরে পেয়ে যান।তবে লন্ডনের সাথে তুলনা করার মূল কারণ এর মানুষ। সিলেটের অসংখ্য মানুষ লন্ডন প্রবাসী। লন্ডনের সাথে এখানের মানুষের সম্পর্ক আত্মিক। প্রতিদিনই লন্ডন প্রবাসী সিলেটিদের কেউ না কেউ দেশে আসছেন। আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করার পাশাপাশি বাংলাদেশ দেখতে পর্যটকের মতোই তারা সিলেট আসেন। সিলেটের সামাজিকতা, ব্যবসা, বিয়ে, সম্পর্ক সকল ক্ষেত্রেই লন্ডন সম্পর্কটি আলোচিত। সিলেট নগরীতে হাঁটলে অহরহ চোখে পড়বে লন্ডন প্রবাসীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সিলেট জেলা শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৭২ সালে। এর পর এর বিস্তৃতি ঘটেছে। জেলা শহর থেকে বিভাগীয় শহর। এখন তা আরো বিস্তৃত হয়ে মহানগরে পরিণত হয়েছে। বেড়েছে লোকসংখ্যা ও আয়তন। জনসাধারণের চাহিদার বিবেচনায় বেড়েছে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ^বিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, অফিস, আদালত, মার্কেট, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা। তারই অংশ হিসেবে নগরীর ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহর ঈশান কোণে স্থাপিত হয়েছে ছোট একটি পার্ক। এতো ছোট পার্ক যে সাধারণ মানুষের চোখেই অনেক সময় পড়ে না। ২০১৩ সালে সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শাহী ঈদগাহ মিনার কমপ্লেক্রা নির্মাণের উদ্যোগ নেন। স্থপতি গওহর উজ-জামান লস্করের ডিজাইনে তিন ধাপে তৈরি মিনারটির উচ্চতা ২০০ফুট। প্রায় ৪ কোটি টাকায় নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মিনারটি মোগল স্থাপত্যের সাথে আধুনিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। মিনার কমপ্লেক্রোর মধ্যে মাত্র কয়েক বর্গগজ জায়গার মধ্যেই পার্কটির অবস্থান। কয়েকটি বেঞ্চ চক্রাকারে বসানো। মধ্যখানে সামান্য খালি জায়গা সবুজ ঘাসে মোড়ানো। আর সম্পূর্ণটাকে মধ্যে রেখে চক্রাকারে লাল টালির পায়ে হাঁটার পথ। একটি বেঞ্চ থেকে অপর বেঞ্চের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে লাগানো ছোট গাছ বেঞ্চগুলোকে কাছাকাছি হলেও মনে হবে অনেক দূরে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিমছাম। কোথাও অশিরিক্ত কিছু নেই। আবার ময়লা আবর্জনারও দেখা পাওয়া যাবে না সেখানে। এই সামান্য কয়েক বর্গগজের পার্কে প্রশান্তি পেতে অথবা একটু অবসর কাটাতে মানুষের ভিড় জমে। বিকেলে অনেকে শিশু ও পরিবার নিয়ে আসেন। চারদিকে ব্যস্ত সড়ক তারপরও মনে হয় যেনো দূরে কোথাও আছি বলে মন্তব্য করেন একজন। এই ছোট এতোটুকু জায়গায় এমন সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যেনো রাজকন্যার নাকের উপর হীরের নাকফুল।
ইউনুছ চৌধুরী(লেখাটি সিলেটের ডাক থেকে সংগৃহীত )