দেশে প্রথমবারের মতো রকেট উদ্ভাবন করেছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী

অনলাইন ডেস্ক

দেশে প্রথমবারের মতো রকেট উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী প্রকৌশলী নাহিয়ান আল রহমান ও তার আলফা সায়েন্স ল্যাবের সদস্যরা। উৎক্ষেপণের জন্য সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে রকেটটি। এ নিয়ে খুশি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নবীন প্রকৌশলী ও ময়মনসিংহবাসী। 

জানা গেছে, গাইবান্ধার বাসিন্দা নাহিয়ান আল রহমান ছোটবেলা রকেট তৈরির প্রচণ্ড ইচ্ছে ছিল। এ লক্ষ্যে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাসহ বিভিন্ন বিদেশি রকেট বিষয়ক বই সংগ্রহ করে তা পড়া শুরু করেন। পরে লেখাপড়ার সুবাদে ২০১২ সালে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়ে এ স্বপ্ন আরও সুদৃঢ় হয়। সেই থেকেই রকেট তৈরির জন্য কাজ শুরু করেন নাহিয়ান। কিন্তু অর্থের অভাবে বেশি দূর এগোতে পারেননি। ২০১৭ সালে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করেন। সুযোগও এসেছিল বিদেশে গিয়ে পড়ার। কিন্তু থেকে যান দেশেই। এরপর ২০১৯ সালে কলেজের ‘আলফা সায়েন্স ল্যাবের’ প্রকৌশলীদের সঙ্গে ধুমকেতু এক্স-০১ নামে প্রকল্প হাতে নিয়ে রকেট তৈরির কাজ শুরু করেন। নিজের প্রাইভেট পড়ানোর জমানো টাকাসহ দুই লাখ টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কাজ শুরু করেন নাহিয়ান। এ কাজে বন্ধুরাও সহায়তা করেছেন।

শুরুতে নাহিয়ান তরল ইঞ্জিনের রকেটের নকশা করেন। পরে করোনা এবং অর্থাভাবের কারণে ডিজাইন পরিবর্তন করে বিকল্প হিসেবে সলিড জ্বালানির ৪০০ ও ১৫০ নিউটন থ্রাস্টের দুটি ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করেন এবং রকেটের আকৃতি কমিয়ে আনেন। এরপর তৈরি করেন ১০ ফুট উচ্চতার প্রোটোটাইপ রকেট। যা উৎক্ষেপণের জন্য সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছে।

নিজেদের বানানো রকেটের সঙ্গে নাহিয়ান ও তার সঙ্গীরা

নাহিয়ান আল রহমান জানান, উদ্ভাবিত রকেট উৎক্ষেপণ সফল হলে ভবিষ্যতে দেশের মাটিতেই রকেট নিয়ে বড় কিছু করার ইচ্ছা আছে। দেশের নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাকাশে ন্যানোস্যাটেলাইট ও মানুষ পাঠাতে কাজ করতে চায় নাহিয়ানের দল।

তিনি আরও জানান, মহাকাশ বিজ্ঞান, জলবায়ু গবেষণা, সামরিক প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে দেশকে বিশ্বের বুকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে চান।

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এস এম আনোয়ারুল হক জানান, নাহিয়ান ও তার দলের রকেট তৈরির বিষয়টি নতুন প্রজন্মের প্রকৌশলীদের উদ্ভাবনী কাজে অনুপ্রেরণা জোগাবে। এই কাজে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আলমগীর হোসেন জানান, রকেট উৎক্ষেপণের জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত সরকারি অনুমতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রকেট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আলফা সায়েন্স ল্যাবের নাহিয়ান ও তার দলের রকেট উদ্ভাবন দেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়। 

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *