সিলেট- জকিগঞ্জ সড়কের ২ কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা: সীমাহীন দুর্ভোগ
ফারহান মাসউদ আফছর::
ব্যস্ততম সিলেট- গোলাপগঞ্জ – জকিগঞ্জ সড়কের গোলাপগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর থেকে বাইপাস পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দের কারণে ভয়ঙ্কর সড়কে পরিণত হয়েছে। বড় বড় গর্তের কারণে হেলেদুলে চলছে যানবাহন। কখনও কখনও এসব গর্তে গাড়ি আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা। দীর্ঘ কয়েকবছর থেকে এ অবস্থা চলতে থাকলেও সড়ক মেরামত না করায় সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে ৫টি উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে।
জানা যায়, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও বড়লেখা উপজেলার লাখ লাখ মানুষের যাতয়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এই সিলেট-জকিগঞ্জ রোড। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে এ সড়কটিতে সংস্কারের অভাবে পিচ উঠে গিয়ে বিশাল গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন এমনকি পথচারীদের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দ্রæত মেরামতের দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী বিভিন্ন ব্যানারে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান করেও কোনো সমাধান পাননি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের হেতিমগঞ্জের হেলালপুর থেকে পাঁচ মাইল বাইপাস পর্যন্ত সড়কটি ছোট-বড় খানাখন্দে এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। পিচ উঠে গিয়ে বিশাল গর্ত আর খানাখন্দের কারণে হেলেদুলে চলছে গাড়িগুলো। আবার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার কারণে গাড়ি চলাচলের সময় ধুলোবালিতে মানুষের দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এক সঙ্গে কয়েকটি গাড়ি এলে ধুলোয় ধুসর হয়ে ওঠে পুরো সড়ক। এদিকে সড়কের গর্তে যানবাহন পড়ে প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। যানবাহন গর্তে আটকা পড়ে সৃষ্টি হয় বিশাল যানজটের। সাধারণ মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয়। প্রয়োজনের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত যানবাহন ও হাজার হাজার মানুষকে প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। সড়কটির এ বেহাল অবস্থা হওয়ায় ৫টি উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষকে দুর্ভোগ নিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। একান্ত বাধ্য হয়ে যাতায়াত করলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। হাসপাতালগামী রোগী, স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ধীরগতিতে যান চলাচলের কারণে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে সময় লাগছে দ্বিগুণ। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে সড়কের এমন দশা থাকলেও কর্তৃপক্ষকে সড়কটি মেরামত করতে উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। যে কারণে সাধারণ লোকজনের ভেতরে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে সংস্কারকাজ না হওয়ায় সড়কটি বেহাল হয়েছে। খানাখন্দে বেহাল সড়কে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। কাদামাটিতে ক্ষেতের জমিতে রূপ নেওয়া বেহাল এ সড়কের ব্যাপারে প্রতিবাদে সোচ্চার স্থানীয়রা।
স্থানীয় ট্রাকচালক কাদির আহমদ বলেন, ‘হিলালপুর পয়েন্টে এলেই আতঙ্ক শুরু হয়, কখন কোন গর্তে পড়ে গাড়ির চাকা নষ্ট হয়ে যায়! অথবা গাড়ি যদি উল্টে যায়! এমন আতঙ্কে গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে হয়। রাস্তাটি জরুরিভাবে সংস্কার করা দরকার।’এই সড়কের বাসচালক ছমির মিয়া বলেন, ‘উপজেলার অন্যান্য সড়কগুলো মেরামত করা হলেও হিলালপুর থেকে বাইপাস পর্যন্ত সড়কটি মেরামত না করায় হিলালপুর-বাইপাস পয়েন্টের অবস্থা খুবই করুণ। সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বর্তমানে গর্তগুলো বড় হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এসব গর্তের উপর দিয়ে গাড়ি চলাচলের কারণে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাস্তাটি অতিদ্রæত সংস্কার করা খুবই জরুরি।’হিলালপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ আহমদ বলেন, ‘এ সড়ক দিয়ে স্কুল ও কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী এবং নানা শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ শহরে আসা-যাওয়া করেন। এছাড়াও শহরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সড়কে যাতায়াত করতে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হন।’
গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সিলেট শহরের ব্যবসায়ী কাদির আহমদ বলেন, ‘ব্যবসায়িক কারণে প্রতিদিনই সিলেটে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তা বেহাল হওয়ার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। রাস্তার করুণ অবস্থা দেখলে মনে হয় না এ এলাকায় কোনো জনপ্রতিনিধি আছেন।’
হেতিমগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন খান বেলাল বলেন, ‘এটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এই সড়ক দিয়ে ৫টি থানার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু সংস্কারের অভাবে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অতিদ্রæত রাস্তাটি সংস্কারের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’
হেতিমগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমদ সেলিম বলেন, ‘সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের হিলালপুর থেকে বাইপাস পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তাটির অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে বলে বোঝানো যাবে না। দীর্ঘদিন থেকে এই ভাঙা রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষকে বেশ দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সড়কটি সংস্কারের জন্য আমরা কিছুদিন আগে বনিক সমিতি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মানববন্ধন করেছি। আমরা আমাদের অভিভাবক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরীর সঙ্গেও আলোচনা করেছি। খুব দ্রæত রাস্তাটি মেরামতসহ সংস্কার হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। জনগণের স্বার্থে এ রাস্তাটি দ্রæত সংস্কারের জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।’
ফুলবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়সল আহমদ বলেন, ‘আমি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করে যেন রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অবিলম্বে রাস্তাটি সংস্কার করা হোক এবং জনগণকে ভোগান্তির হাত থেকে রেহাই দেওয়া হোক। জনগণ যেন এ রাস্তা দিয়ে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে চলাচল করতে পারে।’
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়–য়া বলেন, ‘সড়কের এই অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে। আশা করছি এই সড়কের দুই কিলোমিটার অংশের সংস্কারকাজ আসছে শীতের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে।’