টানা ৩১ বছর যাবৎ ছুটি না নিয়েই শিক্ষকতা করে চলছেন সত্যজিত বিশ্বাস

অনলাইন ডেস্ক

হোসেন আহমদ:— টানা ৩১ বছরের চাকরিজীবনে এক দিনও ছুটি না নেওয়া ও স্কুলের সব নিয়ম মেনে চলে কর্তব্যপরায়ণতার বিরল নজির স্থাপন করেছেন  যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাস । শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাস ৩১ বছর চাকরি জীবনে একদিনও ছুটি নেননি, বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় বর্ষার দিনে হাঁটু কাদা মাড়িয়ে চরম কষ্ট-দুর্ভোগে স্কুলে আসতে হয়েছে তাকে কোনোদিন এক মিনিট দেরি করেও স্কুলে আসেননি। এমনকি বাবার মরদেহ বাড়ি রেখে স্কুলে ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করিয়েছেন। বিয়ের দিনও ক্লাস নিয়েছেন। ছুটি নেননি অসুস্থতার মধ্যেও। ধোপাদী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েকবছর আগে একদিন স্কুলে এসে দেখলাম, শিক্ষার্থীরা সত্যজিত স্যারকে নিয়ে হৈ চৈ করছে, শিক্ষকের মাথায় পানি দিচ্ছে, এগিয়ে গিয়ে দেখি জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। আমি তাকে ছুটি নিতে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি ছুটি নেননি। সত্যজিত বিশ্বাসের বাবা মাধব চন্দ্রের মৃত্যুর দিনে ও বিয়ের দিনে স্কুল থেকে ছুটি নেননি এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আমার (সত্যজিত) হাতের উপরই মারা গিয়েছিলেন। সকাল ৮টা পর্যন্ত বাবার মরদেহের পাশে ছিলাম। অন্যদের সৎকারের আয়োজন করতে বলে স্কুলে গিয়েছিলাম। স্কুলে ১২টা পর্যন্ত ক্লাস নিয়ে এসে সৎকারের শেষ অংশে অংশ নিয়েছিলাম।

শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, বিয়ের দিনও আমি ছুটি নেইনি। হিন্দু ঐতিহ্য অনুযায়ী আমাদের বিয়ে হয় সন্ধ্যায়। ক্লাস নিয়েই সেদিন বিয়ে করতে গিয়েছিলাম। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে পর দিনই স্কুলে যাই। ক্লাস শেষ করে শ্বশুর বাড়ি থেকে নববধূকে নিয়ে বরযাত্রীদের সঙ্গে বাড়ি ফিরেছিলাম।
শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাস এর কর্তব্যপরায়ণের বিষয়ের সংবাদ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইফায়েস ওসমান মহোদয়ের নজরে আসে। পরে তার নির্দেশনা মোতাবেক এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে সত্যতা জানতে পেরে শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাস কে এক লক্ষ টাকা পুরষ্কার ঘোষনা দেন। সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অভয়নগরের ধোপাদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য এক আয়োজনের মধ্যদিয়ে মন্ত্রীর পক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায় অর্থের চেক তুলে দেন।
বিদ্যালয়ের উন্নয়নে এক লাখ টাকার চেক স্কুল পরিচালনা কমিটির হাতে ও এক লাখ টাকার চেক শিক্ষক সত্যজিত বিশ্বাসের হাতে তুলে দেওয়া হয়। 

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *