অনেকের কাছে এখনও ‘মেয়র সাব’

অনলাইন ডেস্ক

কারো কাছে তিনি ছিলেন রাজনৈতিক গুরু, কারোও বা সহযোদ্ধা, কেউ বা আবার তাকে মানতেন অভিভাবক; বদর উদ্দিন আহমদ কামরান অ‌নে‌কের কাছে এখনও ‘মেয়র সাব’।

সিলেটের রাজনীতির অবিসংবাদিত ব্যক্তি ছিলেন কামরান । একজন রাজনীতিবিদের চরিত্রকে ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সিলেটের সর্বস্তরের মানুষের প্রিয়নেতায়। শুধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নয়, তার নিজগুণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সিলেটবাসীর আস্থার ঠিকানায়।

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় নানা রাজনৈতিক সংকটের সম্ভাবনায় সিলেটের মানুষের পাশে থেকে এই আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে উঠেছিলেন
‘মেয়র সাব’। তার মৃত্যুতে প্রশংসা ঝরেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কণ্ঠেও।

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করার পরপরই দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

কামরান তরুণ বয়স থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। আমৃত্যু জাতির পিতার আদর্শেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন। দলীয় রাজনীতি করলেও তার উদার চিন্তা-চেতনা ও সংবেদনশীল মনোভাবের কারণে তিনি ছিলেন দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের নেতা।

সবার কাছেই তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল অসামান্য। তার জীবন ছিল কর্মময়, ধ্যান ধারণাও ছিল অত্যন্ত সুন্দর, ব্যক্তিগত চরিত্রে ছিল সজ্জন ও সততা সৌরভে উজ্জ্বল। একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা ‘নগর পিতা’ নির্বাচিত হন, যিনি নগরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সিলেটের প্রথম একজন মেয়র।

নিজ বিশ্বাসে অটল থেকে এবং তা অকপটে প্রকাশ করতে পারা একজন ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন তিনি। প্রয়াত মেয়র কামরান ছিলেন একজন ঈমানদার ও ধার্মিক মুসলমান। একই সঙ্গে ইসলামের মর্যাদা এবং দ্বীন প্রচারেও সোচ্চার।

তিনি তার প্রিয় সিলেট নগরীকে ইসলামী স্থাপত্য কলায় সাজিয়ে তুলতে কাজ করেছেন। যার সুবাদে বিদেশি মেহমান কেউ নেমেই যেন বুঝতে পারেন তারা কোথায় এসেছেন! বুকে হাজারো স্বপ্ন থেকে তা বাস্তবে রূপ দিতে মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত সচেষ্ট ছিলেন এই রাজনৈতিক।

সব ধর্মালম্বী মানুষের ম‌নে তিনি ছিলেন পরম প্রিয়জন। ঈদ, দুর্গাপূজা কিংবা বড়দিন অথবা অন্য কোনো উৎসবে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন। তার সহায়তায় অসংখ্য মস‌জিদ,মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা সংস্কার করা হয় ।

“তিল তিল করে তিনি আজকের অবস্থানে এসেছেন। মানুষের দাবিতে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। তাই তিনি গণমানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন। সিলেট সিটিকে ঘিরে তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়ন করাই আমাদের সবার দায়িত্ব।”

১৯৭২ সালে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সিলেট পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন,
জনপ্রতিনিধির অগ্নিপরীক্ষায় তিনি বরাবরই উতরে গেছেন সিলেটবাসীর ভালোবাসায়।
বদর উদ্দিন আহমদ মেয়রের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি টানা তিনবার সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।

তৃতীয় ও চতুর্থ নির্বাচনে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে যান তিনি। ২০১৩ সালে সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আরিফের কাছে পরাজয়ের পর কামরান আশাহত হলেও ভেঙে পড়েননি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সক্রিয়। দলীয় নেতা-কর্মীদের বিপদে-আপদে সবসময় পাশে থেকেছেন কামরান।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত ছিলেন। নেত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। কিন্তু তার প্রখর ব্যক্তিত্ব নিয়ে মত ও পথের অমিল থাকলেও সবার সঙ্গেই সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করতে কার্পণ্য করেননি। তার এই মৃত্যুতে রাজনীতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়।

তার রে‌খে যাওয়া ক‌র্মে কো‌টি মানু‌ষের ম‌নে তি‌নি বেঁ‌চে থাক‌বেন আজীবন। ভা‌লো থাকুন ‘‌মেয়র সাব’

আরাফাত হোসেন

লেখক ও সাংবাদিক 

যুক্তরাজ্য থেকে

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *