করোনায় মৃত ব‍্যাক্তির মা,বাবা, ভাই বোনরা অদৃশ্য-লাশের জন‍্য মেলেনি কাপড়

দেশ

কুমিল্লায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত এক ব‍্যাক্তির লাশ কে কবরে নামানোর জন‍্য ভাগ‍্যে জোটেনি এক টুকরো কাপড় আর আত্মীয় স্বজন সবাই ছিলেন অদৃশ্য।কুমিল্লার দ্বেবিধার উপজেলায় গঠে নির্মম এই গঠনা।লাশের দাফন কার্য সম্পাদন করে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে ৪০জনের একটি টিম। দাফন কার্য সেরে  হৃদয়বিধারক এই গঠনার বর্ণনা দিয়ে এক ফেইসবুক স্টেটাস দেন কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম.আবু কাউছার অনিক।যা হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো।

আমাদের আজকের গল্প…..

অহিদুর রহমানের লাশটি কবরে নামাতে আমাদের একটি কাপড়ের দরকার পড়লো। তার পরিবারের কাছে চাইলাম, কেউই দিতে এগিয়ে এলো না। অহিদ করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে, তাই ভয়। শেষে এক মহিলার একটি পুরনো ওড়না দিলেন! ভাইটির শেষ বিদায়ে এই পুরাতন ময়লা ওড়না ব্যবহার করতে বিবেক সায় দিচ্ছিলো না, বুকে জড়িয়ে লাশ কবরে নামালাম। অহিদের গল্পের আরো কিছুটা পেছনে ফিরে যেতে চাই।

রাত তখন ৯টা পেড়িয়ে। অহিদের মৃত্যুর সংবাদ শুণে আমরা কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগ ওরা ৪১জনের টীম লাশ দাফনের জন্য তার বাড়িতে ছুটে গেলাম। অহিদের বাড়ি গিয়ে যা দেখলাম, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা ভুলতে পারবো না!

অহিদের বাড়ির সামনে একটি এম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে। আশে পাশে খোঁজ করে কাউকে পেলাম না। ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করলাম, লাশ কোথায়? ড্রাইভার ইশারায় দেখিয়ে দিলেন।
অহিদের নিঁথর দেহ এম্বুলেন্সে পলিথিন মোড়ানো কাগজে পড়ে আছে। আমরা এম্বুলেন্স থেকে লাশ ধরাধরি করে নামালাম। লাশের মালিক খোঁজতে গিয়ে কিছু দূর দেখলাম অন্ধকারে এক মহিলা বসে কাঁদছেন। জানতে পারলাম তিনি মৃত অহিদের স্ত্রী। স্বামী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় তাকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অহিদের ভাইদের খোঁজ নিয়ে জানলাম ওরা অদৃশ্য।
মা,বোনদের কোন আলামত পেলাম না। কেউ লাশের পাশে আসতেছেন না। প্রতিবেশী সবার দরজা বন্ধ। ইউপি মেম্বার,চেয়ারম্যানকে খোঁজ করেও পাওয়া গেল না। স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতা এসে তার বক্তব্য বললেন গ্রামের নির্দিষ্ট কবরে অহিদ কে দাফন করা যাবে না। লাশ নিয়ে যাওয়া যাবে না তাদের স্বাভাবিক চলাচলের পথ দিয়ে।হুঁশিয়ার করেই তিনি গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেন।

আমি মনে মনে অহিদের বাবার খোঁজ করলাম। জানতে পারলাম তিনিও বাড়িতে আছেন কিন্তু…. নিরাপদে বাসায়! শুণেছিলাম, ‘পিতার কাঁদে নাকি সন্তানের লাশ পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি!’ সে ভার অহিদের বাবা কেন নিতে চাইলেন না, জানি না! চোখের পানি ছেড়ে এখনো ভাবছি আর এই লেখাটি লিখছি। আমরা অহিদের গোসল দিলাম। জানাজা পড়ালাম। নেতার হুঁমকির কারনে অহিদের লাশ নিয়ে চললাম কৃষি জমি হয়ে কখনো কাঁদা পানি, কখনো প্রায় হাঁটো পানির পথে, পুকুর পাড় বেয়ে, কখনো বাঁশমুড়ার সরু পথ কাটিয়ে। অহিদের নিঁথর দেহ নিয়ে চলছি আমরা! ছাত্রলীগের ভাইয়ের কেউ জিকির পড়ছে, কেউ আমার মতো স্তব্দ। অহিদের লাশের পালকি আমার কাঁদে। ঠোঁট ফেঁটে চিৎকার বের হচ্ছে না! দু’চোখ বেয়ে অঝোর পানি পড়ছে। অহিদ আমাদের ক্ষমা করিস ভাই!

এম.আবু কাউছার অনিক
সভাপতি
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কুমিল্লা উত্তর জেলা শাখা।

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *