গোলাপগঞ্জে করোনা যুদ্ধে নির্ভীক সৈনিক রফিকুল ইসলাম

সিলেট

ফারহান মাসউদ আফছর::

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারন মানুষদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সংক্রমণের বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টরাও। এমনই একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রফিকুল ইসলাম। তিনি দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্ব পালন করছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। (ক্যাভিড-১৯) মহামারী করোনা ভাইরাস দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর গোলাপগঞ্জ উপজেলায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে ভাইরাস আক্রান্ত রোগী অথবা যাদের মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তাদের নমুনা সংগ্রহ করছেন রফিকুল ইসলাম । আবার করোনা পজিটিভ আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা বাকি সবার নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন। একই সঙ্গে হাসপাতালে আসা উপসর্গের রোগীদের নমুনা সংগ্রহের পর সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানোর দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। করোনা মহামারীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্দিধায় এই পেশাগত দায়িত্বটি পালন করে যাচ্ছেন তিনি। যেখানে শতভাগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সেখানে একজন মেডিকেল ট্যেকনোলজিষ্ট রফিকুল ইসলাম নিজের দ্বায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ আন্তরিক ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২এপ্রিল থেকে রফিকুল ইসলাম করোনা রোগী সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৫৭১টি নমুনা সংগ্রহ করেছেন যার মধ্যে ৪৮ জনের রিপোর্ট পজেটিভ আসে।খোজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি উপজেলার বেশিরভাগ নমুনা রোগীর বাড়িতে বাড়িতে গিয়েই সংগ্রহ করেছেন। যখন যেখান থেকেই কল আসে রফিকুল ইসলাম নির্ধিধায় ছুটে যান নমুনা সংগ্রহে। সারাদিন গোলাপগঞ্জের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়ে সংগ্রহ করেন বিভিন্ন জনের নমুনা। বাসায় ফিরে গিয়ে পরিবারের কাছ থেকে আলাদা থাকেন তিনি। স্ত্রী ও আদরের ২সন্তানের কাছে থেকে বিগত প্রায় দুইমাস অবদি থাকতে হয় নিরাপদ দূরে তবুও একটু বিষাদের সুর নেই মনে।

এবিষয়ে আলাপ হলে গোলাপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকাদক্ষিণ সরকারি কলেজ এর অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ইউনুস চৌধুরী বলেন, বর্তমান সময়ে গোলাপগঞ্জের প্রেক্ষাপটে রফিকুল ইসলাম একজন প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা এবং দায়িত্ব পালনে তার এই আন্তরিকতা ও সাহসিকতা অবশ্যই প্রসংশার দাবিদার ও আমাদের অনেকের জন্য অনুকরণীয়।

এবিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন,স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখিনি কিন্তুু ছাত্রজীবন থেকেই দেশের জন্য কাজ করার স্বপ্ন দেখতাম তাই আজকের এই সংকটময় পরিস্সিতিতে শুধুমাত্র পেশাদরিত্বের দ্বায় থেকে নয় সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করার দ্বায়বদ্ধতা থেকে আমি এরকম ঝুকিপূর্ণ কাজ করতে উৎসাহিত হই। করোনা যুদ্ধে সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।এই কাজে আমি শুধু একা নয় স্বাস্থ্যসহকারি এবং সি এইচ সি পি রা আমাকে সহায়তা করছেন তাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আমি যতক্ষন সুস্থ থাকব ইনশাআল্লাহ যেকোন পরিস্থিতীতে আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে বিন্দুমাত্র পিছপা হব না ।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার বদরুল ইসলাম শোয়েব বলেন,বর্তমানে করোনা সৃষ্ট সংকটে ডাক্তার,নার্স,পুলিশ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মেডিকেল ট্যেকনোলজিস্টদের ভূমিকা অপরিসীম । সমগ্র বাংলাদেশের মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ন্যায় গোলাপগঞ্জের মেডিকেল ট্যেকনোলজিস্ট রফিকুল ইসলাম এর অসম সাহসী ভূমিকা নিশ্চয়ই প্রশংসনীয় । জাতির এরকম একটি দুঃসময়ে রফিকুল ইসলামদের ত্যাগ আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মদের ত্যাগের শিক্ষা দেয়। আশা করি নিরাপদ দুরত্বের মাধ্যমে সাহসের সহিত সংশ্লিষ্ট কাজের ধারা অব্যাহত রাখবেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মনিসর চৌধুরী বলেন, জীবনের ঝুকি নিয়েও ভয়কে উপেক্ষা করে নমুনা সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছেন রফিকুল ইসলাম। তার এই পেশাগত দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে তার মাঝে মানবিক মূল্যবোধ দেখতে পাচ্ছি আমরা তা সত্যিই প্রশংসনীয়। গোলাপগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার পর থেকেই
মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে রফিকুল নমুনা সংগ্রহ প্রস্তুুত থেকে শুরু করে পরিক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানোর দায়িত্ব সে পালন করে যাচ্ছে। এটি বিরাট একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। তার এই দায়িত্বশীল ভূমিকার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলার সাধারন মানুষ সন্তুষ্ট। 

প্রশংগত এখন পর্যন্ত উপজেলায় ৫৭১ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। এরমধ্যে শুক্রবার (২৯ মে) পর্যন্ত ৪৮ জনের পজিটিভ এসেছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫ জন ও ১ জন মারা গেছেন।

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *