শতবর্ষে ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়-২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর বর্ণাঢ্য সব আয়োজন

Top News
-আলোর মশাল হাতে নিয়ে সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে শত বর্ষে পদার্পন করেছে গোলাপগঞ্জ উপজেলার আলোকিত বিদ্যাপিঠ ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। আলোক বর্তিকা হাতে নিয়ে একশ’ বছরে পা দিয়েছে আলোকিত জনপদ ভাদেশ্বরের স্বনামধন্য এই বিদ্যাপীঠ। ১৯১৯ সালের প্রতিষ্টালগ্ন থেকে শত শত জ্ঞানী-গুনী আর অসংখ্য সুশিক্ষিত মানুষ তৈরির এই সূতিকাগারের দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য শতবর্ষ অনুষ্ঠান আগামী ২৫ ডিসেম্বর বুধবার ও ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। সমাপনী দিনে থাকবেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি।


দু’ দিন ব্যাপী এ উৎসবে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী, সাবেক পিএমজি রম্যলেখক আতাউর রহমান, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমদ চৌধুরী, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ, সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড ইকবাল আহমদ চৌধুরী সহ এই বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন গুণী ছাত্র ছাত্রীরা।

 শতবর্ষ অনুষ্ঠান কে সামনে রেখে বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। অসংখ্য ব্যানার ফেস্টুন, পতাকায় সজ্জিত হচ্ছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে আশপাশ এলাকা। বিশেষ করে গোলাপগঞ্জের সড়কে সড়কে শোভা পাচ্ছে অসংখ্য তোরণ। নানা আয়োজনে সাজানো হয়েছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। আলোচনা সভা, পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়ানো, স্মৃতিচারণ, সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, খেলাধুলাসহ মনোমুগ্ধকর আকর্ষণীয় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে গোলাপগঞ্জের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে আছেন উপজেলা থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং অনেকে আবার সরকারের প্রসাসনের অনেক যায়গায় আসীন, তারাও অংশগ্রহন করবেন বলে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। উৎসবে যোগ দিতে অনেকে প্রবাস থেকে ইতিমধ্যে বাড়িতে এসেছেন। শতবর্ষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের সীমা নেই। নিজের প্রতিষ্ঠানের শত বছর পূর্তি উপলক্ষে উৎফুল্ল ও আনন্দিত তারা।
 বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯১৯ সালে খান বাহাদুর নাছির উদ্দিন চৌধুরীর উদ্যোগে এবং গ্রামের সর্বস্তরের মানুষের উৎসাহব্যঞ্জক অংশ গ্রহণে প্রতিষ্ঠিত হয় ভাদেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়। প্রথমে ভাদেশ্বর দক্ষিণভাগে শুরু হয় এবং পরে ১৯২১ সালে বিদ্যালয়টি বর্তমান স্থানে ভাদেশ্বর পূর্বভাগে স্থাপিত হয়।সবছে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো নিজের উদ্যোগে, নিজের অর্থে প্রতিষ্ঠিত হাইস্কুল জনগণের দাবি থাকা স্বত্ত্বেও জীবিত অবস্হায় নিজের নামে স্কুলের নামকরণ করেননি খান বাহাদুর নাছির উদ্দিন চৌধুরী। ১৯৫৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে এলাকাবাসী তার কর্ম ও স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নামকরণ করেন ‘ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়’। উচ্ছ মাধ্যমিক চালু হলে ২০১৫ সাল থেকে এই নন্দিত প্রতিষ্ঠান ‘নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ’ নামে উন্নীত হয়েছে।
১৯১৯সাল থেকে হাটি হাটি পা পা করে শুরু করে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে এক অন্যতম বিদ্যানিকেতনে পরিণত হওয়া এই বাদ্যাপিঠ এখন কালের সাক্ষী অনেক ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ । এই ইতিহাসের সাক্ষি অনেক প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা কথা বলতে চান তাদের অনেক স্মৃতি বলতে চান বর্তমানদের সামনে তুলে ধরতে চান ইতিহাস। এ নিয়ে কথা হলে স্কুলের সাবেক ছাত্র ও সাবেক পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিলেট-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শরফ উদ্দিন খসরু বলেন, তিনি বিদ্যালয়ের এসএসসি ১৯৫২ ব্যাচের ছাত্র। তিনি ও জুনেদ চৌধুরী প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সেই সময় শুধুমাত্র সিলেট পাইলট ও অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়া মফস্বলের একমাত্র তারাই প্রথম বিভাগ পেয়েছিলেন। ‘তখন টিনের ঘর ছিল। বিদ্যুৎ না থাকায় টানা পাখা ছিল তবে তখন শিক্ষকরা অনেক আন্তরিক ছিলেন। 
প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি ও শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের আহবায়ক মাসুদ আহমদ চৌধুরী বলেন, এই অঞ্চলের এমন অনেক পরিবার রয়েছে-যাদের ছেলে-মেয়ে, বাবা, দাদা, দাবি সবাই এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তাই সকলের এই মিলনমেলা আনন্দঘন ও স্মৃতিময় করে তুলতে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তণ বিশেষ করে চল্লিশের দশকের শিক্ষার্থীরা যারা এখনো জীবিত রয়েছেন তারাই অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ। প্রতিষ্টানের ৮৮ব্যাচের ছাত্র রণকেলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এর গভর্ণিং বডির সভাপতি মিজানুর রহমান চৌঃ রিংকু এর সাথে আলাপ হলে তিনি বিদ্যালয় এর প্রতিষ্টাতা খান বাহাদুর নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন আমি যেমন এই প্রতিষ্টানের ছাত্র ছিলাম, আমার পিতা আব্দুর রহমান চৌঃ ও এই প্রতিষ্টানে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছেন। শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্টানটি আমাদের প্রাণের অনুষ্টানে পরিণত হয়েছে ,তিনি তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই চৌঃ স্যারের কথা স্বরণ করে বলেন স্যার অত্যন্ত যত্ন সহকারে আমাদের পাঠ নিতেন এরকম শিক্ষা গুরু পাওয়া এখন দুষ্কর । একই কথা বলেন ৮৮ব্যাচের ছাত্র মতিউর রহমান মুতিব। এদিকে প্রতিবেদক সরজমিন ক্যাম্পাসে গেলে দেখা হয় ৮৬ব্যাচের ছাত্র খুরসেদ আলম চৌঃ রিপন,এনামুল হক রুহেলসহ আরো অনেকের সাথে তাদের প্রত্যেকের মদ্যেই আবেগ ও উচ্ছাস লক্ষ করা যায় প্রত্যেকই তাদের সময়কার সৃতিচারণ করে বলেন ইমাম উদ্দান চৌঃ স্যার ছিলেন তখন প্রধান শিক্ষক তিনি একজণ গুণি ও মহৎ শিক্ষক ছিলেন তার অবদান অনস্বীকার্য । 

গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী শতবর্ষ উদযাপনে আনন্দিত জানিয়ে বলেন, ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ সমগ্র দেশের মধ্যে বিশেষ করে সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে এই বিদ্যাপীঠের অবদান অনস্বীকার্য। শতবর্ষ পূর্ণ করা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। তিনি অনুষ্ঠানের আয়োজক, বিশেষ করে বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করেন।

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *