‘রেহানা মরিয়ম নূর’- কানে এ যেন বাংলাদেশের দিন

দেশ

এক বছরের অপেক্ষা। এ যেন ভীষণ এক পরীক্ষা। সময় আর শেষ হয় না। অবশেষে আসে সেই চূড়ান্ত মুহূর্ত। ৩ জুন কান চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক থিঁয়েরি ফ্রেমোর ঘোষণায় আসে বাংলাদেশের রেহানার নাম। এটি আঁ সার্তেঁ রিগায় নির্বাচিত হয়েছে। তখন যেন দীর্ঘশ্বাস ফেলেন সিনেমার নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদসহ পুরো টিম।

সেদিন সিনেমার অন্যতম প্রযোজক রাজীব মহাজন বলেন, ‘গত বছর উৎসব স্থগিত হওয়ার সময় কান থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল, রেহানায় কানের লোগো ব্যবহার করতে পারো। আমরাই তখন বলি, অপেক্ষা করে সরাসরি উৎসবের অংশ হতে চাই। কারণ, এটা আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় সম্মানের ছিল। তারা রাজি হলে আমাদের দিন গোনা শুরু হয়। জানতাম, নিশ্চিত সিনেমাটি আঁ সার্তেঁ রিগায় জায়গা পাচ্ছে, এরপরও অজানা একটা ভয়, চিন্তা ছিল বছরজুড়েই।’ আজ ৭ জুলাই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ফরাসি সময় ১১টা ১৫ মিনিট। বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ১৫ মিনিটে সিনেমাটি সাল দুবুসিতে প্রদর্শিত হবে। জানা যায়, একই দিন কানের নতুন মাল্টিপ্লেক্স সিনেয়ুম অরায় ছবিটি প্রদর্শিত হয়।

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ ও অভিনয়শিল্পী আজমেরী হক বাঁধন
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ ও অভিনয়শিল্পী আজমেরী হক।

আঁ সার্তেঁ রিগায় প্রথম ও দ্বিতীয় সিনেমার জন্য বিশ্বের মেধাবী নির্মাতাদের জায়গা করে দেয় কান। সেই সিনেমাগুলোতে কিছু বিশেষত্ব থাকতে হয়। রেহেনায় কি আছে? এককথায় উত্তর, চলমান জীবনের অভিজ্ঞতা দেখাতে চেয়েছেন সাদ। সিনেমা নির্মাণেও রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্র্য। এটি শুধু ৫০ মিমি লেন্সে শুট করা। কোনো স্টুডিও লাইট ব্যবহৃত হয়নি। এটি একটি চেম্বার বেজড ফিল্ম। সম্পূর্ণ শুটিং হাসপাতালের ভেতরে ধারণ করা। বাইরের কোনো দৃশ্যই নেই। বেশির ভাগ দৃশ্য সিঙ্গেল শটে ধারণ করা। কাঁধেই পুরো সিনেমার শুটিং করেছেন ক্যামেরাম্যান।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে আজ দেখানো হয় আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’
সিনেমাটির জন্য প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধনসহ অন্যদের এক বছরের বেশি সময় অনুশীলন করতে হয়েছে। বাঁধনের জন্য ছিল কঠিন পরীক্ষা। তাঁর পা, হাত, ঘাড়, নাক—সবকিছুর মার্কিং ছিল। প্রতিটি শটে তাঁর পাঁচটির বেশি মার্কিং মেনটেইন করতে হতো। গণিতের সূত্রের মতো নির্মাতা যেভাবে বলতেন, সেভাবে কথা বলা, চলাফেরা, হাঁটতে হতো। প্রতিটি দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে ২৫ থেকে ৩০ বার টেক দিতে হয়েছে। টেক ওকে হওয়ার পরেও সাদের কপালে ভাঁজ পড়ে থাকত। বাঁধন বলেন, ‘শট ওকে হলেও আমাদের মনে হতো সাদ হয়তো দুই ভাগও সন্তুষ্ট না। এই নিয়ে পুরো ইউনিট কিছুটা ডিপ্রেশনে থাকতাম। আমাদের চেষ্টা ছিল সাদকে খুশি করা।’

ছবির প্রতিটি দৃশ্যেই রেহানা আছে। দীর্ঘ সময় ধরে চরিত্রটার মধ্যে থাকতে থাকতে একসময় তিনি রেহানার মতো চলাফেরা করতে থাকেন।

১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিটের ড্রামা জনরার এই সিনেমাটির ট্রেলারে একাধারে মা, শিক্ষক ও প্রতিবাদী এক চরিত্রে বাঁধনকে দেখা গেছে। এখন অপেক্ষা দেশের দর্শক কবে সিনেমাটি দেখতে পান।

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *