রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার সকল ডিজিটাল ডিভাইস বন্ধ করে রেখেছিল

অনলাইন ডেস্ক

কেএমপির উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার সকল ডিজিটাল ডিভাইস বন্ধ করে রেখেছিল। তাকে আমরা কোনোভাবেই ট্র্যাক করতে পারছিলাম না। গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে যে বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই বাড়ির দুই নারীর সঙ্গে তিনি বসে গল্প করছিলেন, তবে আমাদের অফিসাররা তাকে উদ্ধারের পর কোনো কথার জবাব দেননি। সেই থেকে তিনি নির্বাক রয়েছেন।’

ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে উদ্ধারের পর খুলনার দৌলতপুরে নেয়া পর্যন্ত রহিমা বেগম মুখ খোলেননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

প্রায় এক মাস ধরে দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা থেকে মা নিখোঁজের অভিযোগ করে মরিয়ম মান্নানের পোস্টগুলো ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার মধ্যে শনিবার রাতে রহিমাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের একটি ঘর থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীকে। সেখান থেকে পৌনে ১১টার দিকে খুলনার উদ্দেশে রওনা হয় পুলিশ। রাত ২টা ১০ মিনিটে মরিয়মের মাকে দৌলতপুর থানায় নেয়া হয়।

উদ্ধারের পর নিশ্চুপ মরিয়মের মা, আশ্রয়দাতারা হেফাজতে
ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করে খুলনার দৌলতপুরে নেয়া হয় রহিমাকে। ছবি: নিউজবাংলা

রহিমাকে যে বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেখান থেকে তিনজনকে আটক করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী, তার ছেলে এবং কুদ্দুসের ভাইয়ের স্ত্রী।

ব্রিফিংয়ে কী জানাল পুলিশ

ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনায় আসা মরিয়ম মান্নানের মাকে উদ্ধার নিয়ে শনিবার গভীর রাতে খুলনার দৌলতপুর থানায় ব্রিফিং করেন মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন।

তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম, রহিমা বেগম ফরিদপুরে আছেন। পরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারের নির্দেশে আমাদের দক্ষ কিছু কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।’

রহিমার অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছিল না জানিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার সকল ডিজিটাল ডিভাইস বন্ধ করে রেখেছিল। তাকে আমরা কোনোভাবেই ট্র্যাক করতে পারছিলাম না।

‘গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে যে বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই বাড়ির দুই নারীর সঙ্গে তিনি বসে গল্প করছিলেন, তবে আমাদের অফিসাররা তাকে উদ্ধারের পর কোনো কথার জবাব দেননি। সেই থেকে তিনি নির্বাক রয়েছেন।’

পুলিশের ভাষ্য, ফরিদপুরের সেই বাড়ি আটক কুদ্দুস মোল্লার, যিনি রহিমাদের খুলনার বাসায় ভাড়া থাকতেন। খুলনা শহরে পাটকলের শ্রমিক ছিলেন কুদ্দুস।

পুলিশ আরও জানায়, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে রহিমার ছেলে মিরাজ একবার কুদ্দুসের বোয়ালমারীর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। রহিমাদের সঙ্গে কুদ্দুসের তেমন সম্পর্ক ছিল না।

কুদ্দুসের বাড়ি থেকে তিনজনকে আটকের কথা জানিয়ে কেএমপির কর্মকর্তা মোল্লা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ওই বাড়ি থেকে আমরা তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে এসেছি। তারা হলেন কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী, ছেলে ও তার (কুদ্দুস) ভাইয়ের স্ত্রী। এই তিনজনের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, গত ১৭ আগস্ট ওই বাড়িতে রহিমা বেগম গিয়েছিলেন। প্রথমে তারা রহিমাকে চিনতে পারেনি। পরে একপর্যায়ে তাকে চিনতে পারে।

‘তখন তাকে সাবেক বাড়িওয়ালা হিসেবে বেশ সেবাযত্ন করেন (কুদ্দুস ও তার বাড়ির লোকজন)। পরবর্তী সময়ে তাদের কাছে (রহিমা) জানান, এর আগে তিনি গোপালগঞ্জের মকছেদপুর ও চট্টগ্রামে ছিলেন।’

উদ্ধার হওয়া রহিমাকে শুরুতে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হবে। নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনে সেখান থেকে তাকে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হবে।

রহিমার প্রতিবেশীর অভিযোগ

রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় থানায় আনার পরে মহেশ্বরপাশা থেকে ছুটে আসেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।

প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘মরিয়মের বাবা মান্নান হুজুরের তিনটি বিবাহ ছিল। রহিমা বেগমদের পক্ষ ও আগের একটি পক্ষ স্বামীর মৃত্যুর সূত্রে একই জমি পেয়েছিলেন, তবে রহিমা বেগম অন্য পক্ষকে জমি ভোগ দখল করতে দিতেন না। তাই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেদের অংশের জমি প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি করে দেন। তারপর থেকে কখনোই প্রতিবেশীরা সেই জমি দখলে নিতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘জমি দখল করতে গেলে তারাই (রহিমা বেগমরা) মারামারি শুরু করে। থানা পুলিশ বা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এক বছর আগে এ নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তাদের মারামারি হয়েছিল। সেই থেকে স্থানীয় মানুষ তাদের সঙ্গে মিশতে চায় না।

‘ওই দখলে রাখতে তারাই নাটক সাজিয়েছে। আমরা আগেও থানা পুলিশকে জানিয়েছিলাম। কারণ অন্যদের কেনা জমি তারা দখল করে রাখলেও আদালত একদিন রহিমা বেগমের বিপক্ষে রায় দেবে। সেদিন জমি ছেড়ে দিতে হবে। শুধু জমি দখলছাড়া না করতে তারা এই নাটক সাজিয়েছেন।’

রবিউল আরও বলেন, ‘স্থানীয় মানুষ হিসেবে আমরা যতদূর জানি, রহিমা বেগমকে তার মেয়েরা তেমন ভালোবাসত না। মেয়েরা মায়ের কথাও তেমন শুনত না। তার মা মেয়েদের বিয়ের জন্য বেল্লাল হাওলাদার ওরফে বেল্লাল ঘটককে নিয়মিত বাড়িতে ডাকতেন।

‘মেয়েদের ওপর বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে তিনি সেই বেল্লাল ঘটককেই বিয়ে করেন। মেয়েরা তাকে দেখত না বলেই তিনি নতুন করে আরেকটি বিয়ে করেন।’

অপহরণ মামলা, জিডি ও সংবাদ সম্মেলন

গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। রাত সোয়া ২টার দৌলতপুর থানায় অপহরণের মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরী।

সে মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, নিখোঁজের সময় রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল হাওলাদার বাড়িতে ছিলেন। পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নেমেছিলেন রহিমা। দীর্ঘ সময় পরও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

মাকে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে ২৮ আগস্টে দৌলতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী।

রহিমা নিখোঁজ হয়েছেন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সোচ্চার হন মরিয়ম মান্নানসহ তার অন্য মেয়েরা।

গত ১ সেপ্টেম্বর খুলনায় সংবাদ সম্মেলন করেন রহিমার বাড়ির লোকজন। সে সময় জানানো হয়, রহিমার সঙ্গে জমি নিয়ে স্থানীয়দের মামলা চলছে। রহিমার করা সেই মামলায় আসামিরা হলেন প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম পলাশ, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফ।

আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই।

দৌলতপুরে যে বাড়ি থেকে রহিমা নিখোঁজ হয়েছেন সেখানে শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির দ্বিতীয় তলা (যেখানে রহিমা থাকতেন) তালাবদ্ধ। নিচ তলায় ভাড়াটিয়ারা রয়েছেন।

ভাড়াটিয়ারা জানান, ওই বাড়িতে রহিমা ও তার স্বামী বেল্লাল নিয়মিত থাকতেন না।

ভাড়াটিয়া আকলিমা বেগম বলেন, ‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে রহিমার জমি সংক্রান্ত বিরোধ হয়। তারপর থেকে রহিমা ও তার স্বামী খুলনা শহরের দিকে কোথাও ভাড়া থাকতেন। দেড় থেকে ২ মাস পরপর একবার এই বাড়িতে আসতেন। এক-দুই দিন থেকে আবারও চলে যেতেন।’

তিনি বলেন, ‘নিখোঁজের আগের দিন তিনি এখানে এসেছিলেন। রাতে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তার স্বামীর সঙ্গে ছিলেন।

‘পরে রাত ১১টার দিকে শুনি, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি দ্বিতীয় তলা থেকে একটি বালতি নিয়ে নিচে এসেছিলেন পানি নিতে। পরে তার স্বামী কিছু দূরে এগিয়ে গিয়ে জানান, রহিমার এক জোড়া স্যান্ডেল ও ওড়না পাওয়া গেছে।’

অন্য নারীকে মা দাবি

২২ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে ১২ দিন আগে উদ্ধার হওয়া এক নারীর মরদেহকে রহিমা বেগমের বলে দাবি করেন তার মেয়েরা। ওই রাত পৌনে ১২টার দিকে মরিয়ম মান্নান ফেসবুক এক পোস্টে বলেন, ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি আমি এইমাত্র।’

উদ্ধারের পর নিশ্চুপ মরিয়মের মা, আশ্রয়দাতারা হেফাজতে

২৩ সেপ্টেম্বর সকালে রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান, মাহফুজা আক্তার ও আদুরী আক্তার ফুলপুর থানায় পৌঁছান।

ওই সময় পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় ওই নারীর ছবিসহ পরনে থাকা আলামতগুলো মেয়েদের দেখান। মরিয়ম মান্নান ছবিসহ সালোয়ার-কামিজ দেখে দাবি করেন, এটিই তার মায়ের মরদেহ।

মরিয়ম মান্নান সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘২৭ দিন ধরে আমার মা নিখোঁজ। আমরা প্রতিনিয়ত মাকে খুঁজছি। এরই মধ্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। সালোয়ার-কামিজ ছাড়াও ছবিতে আমার মায়ের শরীর, কপাল ও হাত দেখে মনে হয়েছে, এটাই আমার মা।’

উদ্ধারের পর নিশ্চুপ মরিয়মের মা, আশ্রয়দাতারা হেফাজতে

সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে মরিয়মকে জানানো হয়, ডিএনএ টেস্ট ছাড়া মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

ফুলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মোতালেব চৌধুরী শুক্রবার নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘মরিয়মের মায়ের বয়স ৫৫ বছর। আমরা যে গলিত মরদেহটি উদ্ধার করেছি, তার আনুমানিক বয়স ২৮ থেকে ৩২ বছর মনে হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনায় মরদেহটি তার মায়ের নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।’

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘গত ১০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বওলা ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহটির পরনে তখন গোলাপি রঙের সালোয়ার, গায়ে সুতির ছাপা গোলাপি, কালো-বেগুনি ও কমলা রঙের কামিজ এবং গলায় গোলাপি রঙের ওড়না প্যাঁচানো ছিল।

‘পরে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে না পেরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে ১২ সেপ্টেম্বর দাফন করা হয়। ডিএনএ টেস্ট করতে প্রয়োজনীয় আলামতও সংরক্ষণ করা হয়েছে।’

ওসি বলেন, ‘মরিয়ম মান্নান ওই মরদেহটি তার মা রহিমার দাবি করলেও নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি। চূড়ান্তভাবে মরদেহ শনাক্তে মরিয়মের ডিএনএ টেস্ট করা প্রয়োজন।’

এখন কী বলছেন মরিয়ম মান্নান

মা রহিমা বেগমকে উদ্ধার নিয়ে ফেসবুকে কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মরিয়ম মান্নান। শনিবার রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! এখন আমার থেকে খুশি আর কেউ নেই! খুলনার মহেশ্বরপাশায় নিখোঁজ আমার মাকে অক্ষত অবস্থায় ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

‘এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার এসআই লুৎফুল হায়দার। কেএমপি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি আমাকে নিশ্চিত করেছেন।’

রোববার ভোর ৪টা ২৮ মিনিটে দেয়া আরেক স্ট্যাটাসে মরিয়ম তাকে ভুল না বোঝার আকুতি জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘সন্তান মাকে খুঁজবে খুব স্বাভাবিক। আপনার মা হারিয়ে গেলে আপনিও খুঁজতেন। ফুলপুরের লা* পর্যন্ত গিয়েছি মাকেই খুঁজতে। ফুলপুর থানার ওসিকে আমি তাদের দেয়া একটা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই কল দেই। ওখানে যাই, ডিএনএ টেস্টের জন্য আবেদন করি।

‘আমার মাকে আমি খুঁজেছি। সব জায়গায় যেয়ে একটা কথাই বলেছি, আমার মাকে চাই। মা যদি আত্নগো** করেন, তাকে এনে শাস্তি দিন। তাও আমার মা আমার চোখের সামনে এনে দিন দয়া করে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে মাকে পাওয়া গিয়েছে। আমি মায়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। মায়ের সঙ্গে এখনও দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। মায়ের কোনো ভিডিও অথবা অডিও পাইনি যেখানে মা বলেছেন তিনি আত্মগোপন করেছেন।

‘সকলের কাছে কাছে গিয়েছি মাকে খুঁজে পেতে। যাদের কাছে গিয়েছি তারা জানেন কী চেয়েছি আমি। মাকে চাওয়া ছাড়া আর কিছু চাওয়া আমার ছিল নাহ; এখনও নেই। দয়া করে আমার মাকে আমার মায়ের সঙ্গে আমার দেখা না হওয়া পর্যন্ত আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি মাকে খুঁজেছি; সন্তান হিসেবে আমার দায়িত্ব তাকে খোঁজা।’

মরিয়ম লেখেন, ‘মা এই তিরিশ দিন কোথায় ছিল, কীভাবে ছিল, সেটা আপনাদের মতো আমারও প্রশ্ন। আমার মায়ের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে দিন। আমার মায়ের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত আমাকে সহযোগিতা করুন। মা যদি আত্মগোপন করেও থাকেন, তবুও তাকে খোঁজার দায়িত্ব আমার। আমি মাকে খুঁজতেছি বলে আমাকে বলা হচ্ছে মায়ের আত্মগোপনে আমি জড়িত? তাহলে আমার কী করা উচিত ছিল? যখন শুনেছি আমার মা নিখোঁজ, তখন চুপ করে বসে থাকা উচিত ছিল? যারা প্রথম দিন থেকে বলছিলেন মা আত্মগোপন করেছেন তাদের কথা শুনে মাকে আর খুঁজতাম না? মাকে খুঁজেছি বলে আমাকে দোষী করা হবে?’

‘আপনারা আমাকে যে যাই দোষ দিন না কেন, প্রথম দিন থেকে আমি ছুটতেছি মায়ের জন্য। আজকে পেয়েও গিয়েছি। বারবার বলেছি মা আত্মগোপন করলে সামনে আনুন, শাস্তি দিন। আমার কলিজা জুড়াক। আমার কলিজা শান্ত হইছে। মায়ের চেহারাটা দেখেই আমার শান্তি। আপনারা যে যাই বলেন, এখন আমার মা আমার সামনে।’

মাকে পেতে ‘সহায়তা করায়’ অনেককে ধন্যবাদ জানিয়ে মরিয়ম মান্নান লেখেন, ‘মাকে খুঁজে পাওয়ার লড়াই ছিল আমার। আপনারা সহোযোগিতা করেছেন। আপনাদের সহযোগিতায় আজকে আমার মাকে খুঁজে পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ! প্রথম দিনের মতোই আজকেও আমার একটাই চাওয়া, মাকে ছাড়া কিছুই চাই না। মাকে নিয়ে এই খুলনা শহর ছেড়ে দিব, মাকে নিয়ে দূরে চলে যাব। মাকে চাওয়া ছাড়া কিছুই চাওয়ার নাই।

‘যে জায়গা নিয়ে মামলা, সেই জায়গাও চাই না। শুধু মাকে চাই। মাকে আমার কাছে ন পাওয়া পর্যন্ত আপনাদের সকলের সহোযোগিতা কামনা করছি এবং আমি জানি একজন মাকে তার সন্তানদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পৃথিবীর সকল মানুষ আমার পাশে থাকবেন।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমি খুশি, এক মুহূর্তের জন্যও বিচলিত নই। মাকে খুঁজতে যেয়ে যদি আমাকে দোষী হতে হয়, আমি সেই দোষ মাথা পেতে নেয়ার শক্তি এবং সাহস রাখি, ইনশাআল্লাহ।’

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *