“বাবার আদরের দুলালী”
বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কমবেশি আমাদের সবার ভেতরই আছে। আমরা সবাই বাবাকে ভালোবেসে মনের গহিণে আনন্দ অনুভব করি। বাবার তুলনা তিনি নিজেই। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবা মানে নির্ভরতার আকাশ আর নিঃসীম নিরাপত্তার চাদর।
‘মরিয়া বাবর অমর হয়েছে,
নাহি তার কোন ক্ষয়
পিতৃস্নেহের কাছে হয়েছে
মরণের পরাজয়’—
সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা এতোটাই স্বার্থহীন যে, সন্তানের জন্য নিজের প্রাণ দিতেও তাঁরা কুণ্ঠাবোধ করেন না।
মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, রুগ্ন পুত্র হুমায়ুনকে নিজের জীবনের বিনিময়ে বাঁচাতে সম্রাট বাবর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন হুমায়ুন। আর মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন সম্রাট বাবর।
সবার কাছেই যার যার বাবা বাবা শ্রেষ্ঠ বাবা। আমার বাবা, পৃথিবীর সেরা বাবা নয়! আট-দশটা বাবার মতোই সাধারন সাদামাটা মাপের একজন মানুষ আমার বাবা।
কম কথা বলা, সময়মতো কাজ আর মসজিদে যাওয়া ছোটবেলা থেকেই এই একই নিয়মে চলতে দেখেছি আমার বাবাকে। এখনোও তিনি সেই আগের মতন খুব নিয়মমাফিক ভাবে জীবন যাপন করেন। আমি সেই ছোটবেলা থেকেই বাবার আদরের দুলালী মেয়ে ছিলাম সব সময় বাবার আশে,পাশে থাকতাম। সকালে বাবা কাজে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাবার আগে পিছে ঘুরতাম বাবার সংস্পর্শে থেকে বাবার স্নেহ, ভালোবাসা পাবার আশায়। বাবার একটা অভ্যাস ছিল সকালে কাজে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রেডিও শুনতেন আর সাথে এক কাপ চা খেতেন, তখন আমি বাবার পাশে যেয়ে বসতাম। বাবা স্বর্গীয় মমতা মিশানো চা পিরিচে ঢেলে ঢেলে আমাকে দিতেন আর আমি মহা আনন্দে খেতাম! আহা কি যে সুস্বাদু অমৃতের মতো লাগতো সেই চা। জীবনে আর কখনো সেই চায়ের স্বাদ পায়নি আর পাবো ও না কারণ সেই চা ছিল আমার বাবার অকৃতিম,গভীর মমতা মেশানো চা।বাবার কাছ থেকে পাওয়া সীমাহীন স্নেহ মমতায় জড়ানো ছিল আমার শৈশব। আমরা পাঁচ বোন ছিলাম বাবার আদরের ধন। কখনো উঁচু গলায় আমাদের সাথে কথা বলেছেন বলে আমার মনে পড়ে না। আমার চোখে দেখা সহজ সরল পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ আমার বাবা। বাবাকে নিয়ে লিখতে গেলে আমার লেখার কোন ইতি হবে না।ব্যস্তময় জীবন এবং দূরত্বের কারণে আমার এত প্রিয় বাবাকে কাছে পাই না। তবে এখনো ও যখন বাবাকে কাছে পাই, ইচ্ছা হয়ে সেই শৈশবের মতন বাবার ছোট্ট মেয়েটি হয়ে যাই, বাবার পাশে বসে সেই আগের মত বাবার কাপ থেকে চা খাই, ছোট ছোট আবদার করে করে বাবার সে দুলালী মেয়ে হয়ে যাই।তবে সেটা আর হয়ে ওঠে না কারণ এখন আমি আর সেই ছোট্ট খুকি না… তবে এখনো বাবার পাশে গেলে শৈশবের সেই আদরের দুলালী খুকি হওয়ার কোন সুযোগ মিস করিনা।ছোটবেলার সেই দুলালী মেয়ের মতন বাবার পাশে বসে গল্প করি, কবিতা আবৃত্তি করে হারিয়ে যাই ফেলে আসা সেই শৈশবে। তারপর একসময় আমার শৈশব থেকে চলে যাই বাবার শৈশবে, কৈশোরে, যৌবনের গল্পে । মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকি বাবার জীবন যুদ্ধের আত্মকাহিনী।নির্বাক নিশ্চুপ হয়ে শুনতে শুনতে এক সময় আবার ফিরে আসি বাস্তবে। বাবার অসাধারণ আত্মত্যাগের সব গল্প শুনে গর্বে মাথা উঁচু হয়ে যায়। মনে মনে বলি, বাবা তুমি আমার গর্ব তুমি আমার অহংকার। তোমার মতন একজন বাবার মেয়ে হতে পেরে আমি ধন্য।সবার কাছে সবার বাবাই শ্রেষ্ঠ বাবা। পৃথিবীর সমস্ত আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা হলো বাবা। আমার কাছে আমার বাবা শ্রেষ্ঠ বাবা। এই পৃথিবীতে কারো সাথেই আমার বাবার তুলনা হয় না, আমার বাবার তুলনা আমার বাবা নিজেই। যদিও বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না, তবুও আজ বিশ্ব বাবা দিবসে আমার বাবা সহ পৃথিবীর সব বাবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখিকা–মরিয়ম চৌধুরী
যুক্তরাজ্য প্রবাসী