বাংলাদেশ এক অলৌকিক উন্নয়নের কাহিনি- পাকিস্তান একটি বিপর্যয়ের বৃত্তান্ত

দেশ

কাশ্মির সেন্ট্রাল’ সাময়িকীর প্রচ্ছদে এবার পাশাপাশি দুটো ছবি—বাঁয়ে ঢাকার বহুতল-শোভিত শাপলা চত্বরের ঝকঝকে দৃশ্য। সঙ্গে ক্যাপশন ‘বাংলাদেশ—এক অলৌকিক উন্নয়নের কাহিনি’। তার পাশেই পেশোয়ারের রাস্তায় একটি আত্মঘাতী বোমা-হামলার দৃশ্য, নিচে লেখা ‘পাকিস্তান—একটি বিপর্যয়ের বৃত্তান্ত’!

ভারত-শাসিত কাশ্মিরের জনপ্রিয় সাময়িকী ‘কাশ্মির সেন্ট্রাল’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এভাবেই তুলনা টেনেছে দুটো দেশের। ম্যাগাজিনটির সাম্প্রতিক সংখ্যার (২ জানুয়ারি, ২০২২) প্রচ্ছদে এভাবেই ঠাঁই করে নিয়েছে দুটো দেশের তুলনা। গত অর্ধশতাব্দীতে যে দুই দেশের যাত্রাপথ সম্পূর্ণ ভিন্ন খাতে বয়েছে।

শ্রীনগর থেকে প্রকাশিত ওই ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ নিবন্ধে কাশ্মিরের সাংবাদিক ও গবেষক বসির আসাদ দেখিয়েছেন, পাকিস্তানকে কীভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বহুদূর ছাপিয়ে গেছে। আরও লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের দেহে এত জায়গা থেকে রক্তপাত হচ্ছে যে তারা গোনাই বন্ধ করে দিয়েছে’!

কাশ্মির সেন্ট্রালের ওই নিবন্ধের শুরুতেই পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসানের গত মে মাসে পাকিস্তানের পত্রিকা ‘দ্য নিউজে’ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ড. হাসান বলেছিলেন, পাকিস্তানের হতাশাজনক যাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ পাকিস্তানকে হয়তো বাংলাদেশের কাছেও আর্থিক সহায়তার জন্য হাত পাততে হবে। ওই মন্তব্য নিয়ে সে দেশে বিতর্কও কম হয়নি।

নিবন্ধে একের পর এক পাকিস্তানি চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞের মতামতা উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, সে দেশের প্রতিটি সরকার কার্যত ‘ভিক্ষার পাত্র নিয়ে’ ধনী দেশগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছে এবং এখনও ঘুরছে। বর্তমান ইমরান খানের সরকারও ব্যতিক্রম নয়। পরিণতিতে পাকিস্তান আজ আকণ্ঠ ঋণের বোঝায় নিমজ্জিত।

অন্যদিকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, বছর কয়েক আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই পূর্বাভাসের কথা। যেখানে তিনি বলেছিলেন ৫০তম জন্মদিনে পৌঁছনোর আগেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, মানবিক ও সামাজিক উন্নয়নের সব মাপকাঠিতে পাকিস্তানকে অনায়াসে টপকে যাবে।

নিবন্ধকার বসির আসাদ লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই ভবিষ্যদ্বাণী যে সর্বাংশে সফল হতে পেরেছে তার একটা কারণ যেমন বাংলাদেশের অর্জন, তেমনি অন্য কারণটা হলো পাকিস্তানের রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন এবং সে দেশের ব্যাপক দুর্নীতি আর স্বজনপোষণ।’

করাচির ইনস্টিটিউট অব বিজনেস ম্যানেজমেন্টের কলেজ অব ইকোনমিক অ্যান্ড স্যোশাল ডেভেলপমেন্টও তাদের নিজস্ব গবেষণায় স্বীকার করে নিয়েছে যে আর্থসামাজিক উন্নয়নের সব সূচকেই ‘বাংলাদেশে পরিষ্কারভাবে পাকিস্তানকে ছাপিয়ে গেছে’।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পাকিস্তানি পদার্থবিদ পারভেজ হুদভয়, করাচি ইউনিভার্সিটির সমাজবিদ্যা বিভাগের সাবেক ডিন মুনিস আহমার, সমাজবিজ্ঞানী তাসনিম আহমেদ সিদ্দিকীকে উদ্ধৃত করে ধাপে ধাপে সেখানে দেখানো হয়েছে, ঠিক কোথায় কোথায় বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান এভাবে পিছিয়ে পড়লো।

ড. সিদ্দিকী জানাচ্ছেন, ‘সামাজিক খাতে পাকিস্তানের পারফরম্যান্সই সবচেয়ে হতাশার। ভাবা যায়, এ দেশে আড়াই কোটি শিশু স্কুলেই যায় না (আলিফ আলিয়ার তথ্য), নারী-পুরুষের বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ছে। সারা দুনিয়ায় শিশুমৃত্যুর হার এখানেই সবচেয়ে বেশি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশা, চল্লিশ শতাংশ শিশুর বৃদ্ধিই থমকে যায়। অথচ পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা কেউ এসব নিয়ে চিন্তিত নন!’

বাংলাদেশের তুলনায় পাকিস্তানের এভাবে পিছিয়ে পড়ার আরেকটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে মেয়েদের শিক্ষার অভাব। বলা হয়েছে ‘পাকিস্তান তার শিশুকন্যাদের পড়াশোনাই করায়নি!’ অন্যদিকে বিশেষ করে ২০০৮ সাল থেকে নারীশিক্ষা ও ক্ষমতায়নের ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের নারীশক্তি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশের সিভিল সার্ভিস, সেনাবাহিনী, শিক্ষাব্যবস্থা ও শিল্পমহলেও নারীরা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

কিন্তু কাশ্মিরের একটি সাময়িকীর প্রচ্ছদ নিবন্ধে কেন এভাবে দুটো দেশের তুলনা টানা হলো? এ প্রশ্নের জবাবে নিবন্ধটির লেখক বসির আসাদ জানাচ্ছেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে কাশ্মিরের কিছু বিপথগামী তরুণ এখনও পাকিস্তানকে তাদের আদর্শ মনে করেন। পাকিস্তানও সেই মানসিকতার সুযোগ নিয়ে কাশ্মির ভ্যালিতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বীজ রোপণ করে চলেছে, নাশকতায় মদত দিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি এই নিবন্ধে শুধু এটাই বলতে চেয়েছি, কাশ্মিরি যুবকদের যদি পাশের কোনও দেশের দিকে তাকাতে হয়, তবে সেটা কোনও মতেই পাকিস্তান নয়—বরং বাংলাদেশই হতে পারে তাদের রোল মডেল।’

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *