বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১২৫ বছর পূর্তি উদযাপন

সিলেট


ফারহান মাসউদ আফছর : আর একটিবার আয়রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়…’ এই আহ্বানে দিনভর উৎসবের মধ্যে দিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঢাকাদক্ষিণ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ দত্তরাইল এর ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রাক্তন শিক্ষার্থী পুর্নমিলনী উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। শনিবার দিনব্যাপী পুনর্মিলনী উৎসবে অনুষ্ঠানস্থল নবীন ও প্রবীণ শত শত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় মুখরিত হয়ে উঠে এবং আবেগ-স্মৃতিচারণ-আড্ডায় ছুঁয়ে যায় ।

সহপাঠী বন্ধুদের কাছে পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বাস-উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন অ্যালামনাইরা। কেউ দল বেধে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে মঞ্চে উঠে গলা ছেড়ে গান গাইছিলেন, আবার কেউ কেউ স্কুল জীবনের সেই বন্ধুদের ফিরে পেয়ে গল্পের আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন। এমনই বিভিন্ন মুহূর্তের দৃশ্যের দেখা মেলে অনুষ্ঠানে। শত বছরের এই মহেন্দ্রক্ষণটি বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠান রাঙ্গিয়ে তুলেছিলেন। নবীন ও প্রবীব সকলের মধ্যেই প্রাক্তনদের আবেগ যেন একটু বেশিই ছিল। এক কথায় তাদের চোখে মুখে আনন্দের অশ্রু বইতে দেখা যায়। এর আগে সকাল ৮টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

পরে সকাল সাড়ে ১০টায় আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লক্ষণাবন্দে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। বেলা ১১টায় স্মৃতির আঙ্গিনায় ১২৫ বছর পূর্তি নামক স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব, অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের আহ্বাহক ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনির্ভাসিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জহিরুল হক। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মো: জহিরুল হক বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান পালন একটি ঐতিহাসিক ও বিরল ঘটনা। প্রতিষ্ঠানটি ১২৫ বছর থেকে এই অঞ্চলে শিক্ষার আলো পৌছে দিচ্ছে । অনেক বিখ্যাত মানুষের জন্ম দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। এসব সফল মানুষ তৈরিতে অবদান এই প্রতিষ্ঠানের। আমাদের সকল অর্জনের জন্য আমরা এই প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণী। সেই ঋণের কিছুটা দায়মুক্তির জন্য এখন এই প্রতিষ্ঠান ও এলাকার জন্য কাজ করতেই অ্যালামনাই এসোসিয়েশন। তিনি আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নবীন শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি ও গারিগরি শিক্ষায় আরো গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল আনাম মোহাম্মদ রিয়াজ বলেন, আমাদের দেশে ভবিষ্যত নির্ভর করছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের উপরে। তারা যদি সুশিক্ষা নিয়ে বড় হতে পারে তবে বাংলাদেশ তার স্বপ্ন থেকে কখনো বিচ্যুত হবে না। সিলেটের মধ্যে উর্বর জায়গা গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ-ভাদেশ্বর। এখানের অনেক কৃর্তিমান মানুষ দেশ বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন ও করছেন। আগামী দিনে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। অধ্যাপক আব্দুল সাজিদ আগামীদিনে নবীন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে আরো উজ্জ্বল ও বর্ণাঢ্য করে তুলবেন এই প্রত্যাশা করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ও পরিচালনা করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব শিক্ষক কাজল কান্তি দাস এবং ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য মোহাম্মদ খসরু পারভেজ ও হোসেন আহমদ। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্যে দেন, ঢাকাদক্ষিণ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: রঞ্জিত কুমার দে, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের সাবেক পরিচালক ডা: কর্নেল (অব) রকনুল ইসলাম চৌধুরী, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: বি কর্মকার, ঢাকাদক্ষিণ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল আমিন, বিশিষ্ট শিল্পপতি হাবিল আহমদ চৌধুরী, সাবেক শিক্ষক বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম ফজলুল হক কয়েছ, লেখক ও সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। পরে তাদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন এবং সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। পুর্নমিলনী উৎসবে অংশগ্রহণকারী অ্যালামনাইরা অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার জায়গা ঢাকাদক্ষিণ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ । স্কুল জীবনের সেই স্মৃতিময় সময়ের দিনের কথা সব সময় মনে পড়ে। ইচ্ছে হয় আবার যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই দিন গুলোতে। আজকের পুর্নমিলনী অনুষ্ঠান আয়োজন করায় সবার সাথে দেখা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ১২৫ বছর উপলক্ষে প্রাক্তন শিক্ষা পুর্নমিলনী অনুষ্ঠান উদযাপনের অংশ হওয়া, বিদ্যালয়কে উপস্থাপন করার এই আনন্দ সত্যিই অন্যরকম। প্রাণের সাথে প্রাণ মিশিয়ে ঢাকাদক্ষিণ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতি দায়বদ্ধতা মেটানোর সংকল্প ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শেষ হয়। এছাড়াও দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে কুইজ প্রতিযোগিতায় কৃতি শিক্ষার্থীদের পুরষ্কার প্রদান, মেধাবী ২১ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান ও র‍্যাফেল
ড্র ও এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে অন্যদের উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব আবুল বশর চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সদস্য মনসুর আহমদ, লক্ষণাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খলকুর রহমান,
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল জলিল, অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, নকুল রাম মালাকার, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী গোলাম মোস্তফা খান, স্কাউট ব্যক্তিত্ব ডা: সিরাজুল ইসলাম, খছরু ইসলাম, শিক্ষক বিধান পাল, অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবু ছলমান চৌধুরী, আবদুল ছায়াদ, ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য আবুল লেইছ,
জাকের আহমদ, রেজওয়ান হোসেন রাজু, মোহাম্মদ খসরু পারভেজ, বিশু ভূষণ দেব, নাজিমুল হক লস্কর, রুহেল আহমদ রুহিন, রায়হান উদ্দিন, কামরান হোসেন, হোসাইন আহমদ, হোসেন আহমদ, গোলাম দস্তগীর খান ছামিন, আনোয়ার হুমায়ুন, ছালিম ছিদ্দিক রনি, মাসুদ আহমদ, ময়নুল ইসলাম, গোলাম দস্তগীর খান ছামিন, মোহাম্মদ হানিফ আহমদ, ফারহান মাসউদ আফছর। এছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় ও ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যবৃন্দ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ১১ জন প্রাক্তন শিক্ষককে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। পরে কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ২১জন কৃতি শিক্ষার্থী ও ২১ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, র‌্যাফেল ড্র, স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান এবং মনোজ্ঞ সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *