সময় ডেস্ক –করোনাভাইরাসের কারণে ত্রাণের পরিধি বাড়াচ্ছে সরকার। চলতি মে মাসে ৫০ লাখ পরিবারকে মাসে ২০ কেজি করে খাদ্য (চাল) সহায়তা দেওয়া হবে। এত দিন সাধারণত ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছিল। এ জন্য কোন জেলায় কত পরিবার এই সহায়তা পাবে তা ঠিক করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর ভিত্তিতে উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভুক্ত করে কালকের মধ্যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনসংখ্যা, দারিদ্র্যর হারসহ কয়েকটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের করা হিসাব অনুযায়ী বেশি ত্রাণ পাবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর ও রাজশাহীসহ কয়েকটি জেলা। এভাবে সব জেলার জন্য পরিবার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপকারভোগীদের নামে করা ডিজিটাল কার্ডের ভিত্তিতে এই সহায়তা দেওয়া হবে।
তবে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিসহ ইতিমধ্যে যারা বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আওতায় যারা আছেন, তারা এই সুবিধা পাবেন না। তারা তাদের কর্মসূচির সুবিধা পাবেন। এসব সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরের ব্যক্তিদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আগামী জুন পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন জুনে গিয়ে শুধু তাদের মন্ত্রণালয় থেকেই প্রায় এক কোটি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তার চিন্তা-ভাবনা আছে। এ মাসের শেষে সভা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, সব বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, এখন সারা দেশে এক কোটি ২৫ লাখ পরিবারের সহায়তার প্রয়োজন। এর মধ্যে ৫০ লাখ পরিবার খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৩০ কেজি করে সহায়তা পায়। ১০ লাখ ৪০ হাজার পরিবার ভিজিবির সহায়তা পায়। এ ছাড়া জেলেসহ আরও কয়েক লাখ পরিবার সহায়তা পায়। এসব নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে ৫০ লাখ পরিবার ত্রাণ সহায়তা পাবেন। রোজা ও সামনে ঈদ থাকায় চলতি মাসের চেয়ে মে মাসে ত্রাণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ত্রাণের জন্য নির্ধারণ করা ৫০ লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নগদ কিছু টাকা দেওয়ারও চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে। এই বিষয়টি শিগগির চূড়ান্ত হবে।
করোনাভাইরাসজনিত দুর্যোগে দেশে কর্মহীন হয়ে পড়েছে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। এ জন্য তাদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে সরকার। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে সারা দেশে প্রায় চার কোটি মানুষকে সহায়তা দিয়েছে সরকার। ৬৪ জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে বলা হয়, ১ মে পর্যন্ত এক লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন চাল ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৯২ হাজার ৩৪১ মেট্রিক টন। আর নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে ৪১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া শিশু খাদ্য সহায়ক হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে আট কোটি ৪২ লাখ টাকা।
যে জেলায় যত পরিবার
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, মাঠ পর্যায়ের তথ্য, পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য, জনসংখ্যা, দারিদ্র্যের হার, সম্পদের প্রাপ্যতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে মে মাসে সব জেলায় মোট ৫০ লাখ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন, জামালপুর, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার প্রতিটিতে এক লাখ করে পরিবার এই সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহ জেলার প্রতিটিতে ৯০ হাজার পরিবার এই সহায়তা পাবেন। গাজীপুর, রাজশাহী ও রংপুর জেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতিটিতে ৮০ হাজার পরিবার এই সুবিধা পাবে। তালিকায় ৭৫ হাজার করে পরিবার আছে ফরিদপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায়। নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলার একেকটিতে ৭৭ হাজার পরিবার এই সহায়তায় পাবেন। বাকি এলাকাগুলোতে ৪০ হাজার থেকে শুরু করে ৭২ হাজার পর্যন্ত পরিবার রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চলতি মাসে যারা ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন মে মাসেও তারা পাবেন। তবে তাদের মধ্যে অন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায়
যারা আছেন তারা ত্রাণের সুবিধা পাবেন না। সব তথ্যের ভিত্তিতে করা ডিজিটাল কার্ডের ভিত্তিতে ত্রাণ দেওয়া হবে। ফলে এখানে এখানে অনিয়ম করা যাবে না।