ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতারকৃত মােহাইমিন রহমান রাহির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

সিলেট

সিলেট মহানগরীর একটি আবাসিক হোটেলের দুটি কক্ষে দুই তরুণীকে আটকে রেখে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ মামলার গ্রেফতারকৃত আসামি মােহাইমিন রহমান রাহি (৩৩) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। গত রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে তিনি এমন জবানবন্দী দেন। 

বিষয়টি মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হুদা খান। 

জবনবন্দী প্রদানের পর রাহিকে আদালত কারাগারে প্রেরণ করেছেন এবং বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।

এর আগে শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টা থেকে পরদিন (শনিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত টানা ২২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে সিলেটের আলোচিত এই ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি রাহিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মােহাইমিন রহমান রাহি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।

উল্লেখ্য, ২৩ আগস্ট দিবাগত রাতে মহানগরীর পাঠানটুলাস্থ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী গ্রিন হিল আবাসিক হোটেলের দুটি কক্ষে দুই তরুণীকে আটকে রেখে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ভিকটিম দুই তরুণী সিলেটের জালালাবাদ থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেন। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার এক তরুণী (১৮) কয়েক মাস আগে আইএলটিএস পড়ার জন্য সিলেট মহানগরীতে এসে আরেক নাট্যশিল্পী তরুণী (২৫)-এর সঙ্গে শাহজালাল উপশহরের একটি বাসায় থাকতে শুরু করেন। উপশহর এলাকায় থাকার সুবাধে ওই এলাকার স্নেহা বিউটি পার্লারের গিয়ে তানজিনা আক্তার তানিয়া (২৫) নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তানিয়া সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়সিদ্দি গ্রামের দবির মিয়ার মেয়ে। তিনি শাহজালাল উপশহরের এইচ ব্লকের ৪ নং রোডের আলী ভিলা নামক ৫ তলা বাসায় ভাড়াটে থাকেন। 

পরিচয়ের এক পর্যায়ে তানিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে সিলেটে আইএলটিএস করতে আসা সেই তরুণীর। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সুবাধে গত ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে তানিয়া ফোন করে ওই তরুণীকে বলেন- তার ভাইয়ের জন্য এবি পজেটিভ রক্ত প্রয়োজন। ওই তরুণীর এবি পজেটিভ রক্ত হওয়ায় তিনি যেন এক ব্যাগ রক্ত দেওয়ার জন্য রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালে যান। এমন ফোন পেয়ে ওই তরুণী তার বন্ধবীকে (২৫) নিয়ে তৎক্ষণাৎ রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালের সামনে যান। সেখানে গিয়ে তানিয়াকে দেখতে পেয়ে রক্ত দেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি ওই দুই তরুণীকে জানান- রক্ত দেওয়ার আগে তার এক কাজিনের বাসায় একটু প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন শেষ করে তারা হাসপাতালে যাবেন। এ কথা বলে কৌশলে ওই দুই তরুণীকে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী গ্রিন হিল আবাসিক হোটেলের ৪র্থ তলায় নিয়ে যান তানিয়া এবং তাদের দুজনকে আলাদা আলাদা কক্ষে বসিয়ে রাখেন। এসময় তানিয়ার সহযোগী কয়েকজন তরুণ ও যুবক এসে ওই দুই তরুণীকে আটকে রাখেন এবং রাত সাড়ে ১১টার থেকে একের পর এক ১০-১২ জন যুবক তাদের দুজনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এছাড়াও ভিকটিম এক তরুণীর (১৮) কাছ থেকে তার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা পয়সা জোরপূর্বক নিয়ে যান তানিয়া ও ধর্ষকরা। পরদিন (২৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে ভিকটিম দুই তরুণীকে এক কক্ষে নিয়ে তাদের কাছ থেকে ‘ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি’ এ মর্মে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয় এবং এ কথাগুলো মোবাইল ফোনে ভিডিও করে তাদের ছেড়ে দেন তানিয়া ও তার সহযোগিরা। 

ঘটনার পর দুই ভিকটিম তরুণী জালালাবাদ থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেন। তানিয়া ছাড়াও এই দুই মামলার আসমিরা হলেন- সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মোহাইমিন রহমান রাহি (৩৩), সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার গোবিগন্দগঞ্জ গ্রামের মৃত তহুর আলীর ছেলে জুবেল (৩১), সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকার আলী আকবরের ছেলে রানা আহমদ শিপলু ওরফে শিবলু (৩৫), সুনামগঞ্জ সদর থানার হরিনাপাট গ্রামের ফরহাদ রাজা চৌধুরীর ছেলে নাবিল রাজা চৌধুরী (৩৫) ও সুজন (৩৫) এবং অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জন।

তবে এ ঘটনায় আসামি রানা আহমদ শিপলুর স্ত্রী সোমবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন- তার স্বামীকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *