দিনশেষে মানুষই হেসেছে বিজয়ীর হাসি-কাজল কান্তি

অনলাইন ডেস্ক

উপসম্পাদকীয়::

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, কেমন আছো সবাই? কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলোতে ঘরে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে ওঠেছো নিশ্চয়ই। কি করবে বলো, গত ১৭ মার্চ থেকে এক অদ্ভূত ধরণের ছুটি কাটাচ্ছি আমরা সবাই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরে বন্দী থাকার ছুটি। ছুটির এরকম অভিজ্ঞতা দেশের মানুষের এই প্রথম । যদিও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশের মানুষ এরকম অবরুদ্ধ জীবন কাটিয়েছেন দীর্ঘ নয় মাস। তবে সেই সময়ের প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখন অন্যরকম একটা লড়াইয়ে আমরা শামিল হয়েছি, সবাইকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই। 

কোভিড ১৯, নোবেল করোনা ভাইরাস নামক এক অনুজীবের কাছে সারা বিশ্বের মানুষ পরাস্ত হয়ে আছে। ভয়ংকর একটা সময় পার করছি আমরা সবাই। এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১০টি দেশের প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন লক্ষাধিক মানুষ। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশেও হানা দেওয়া এই ভাইরাসে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন  ৮০৩ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন  ৩৯ জন।

আশংকার বিষয় এই যে, বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং ক্রমাগত বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। তবে আমাদের আতংকিত কিংবা ভয় পেলে চলবে না। মনে রাখতে হবে মানব সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই প্রকৃতি ও মানবসৃষ্ট নানা দুর্য়োগকে নিজ মেধার বিকাশ, বুদ্ধির প্রখরতা আর কৌশল দিয়ে পরাস্ত করেছে মানুষ। দিনশেষে মানুষই হেসেছে বিজয়ীর হাসি। আমরা আশাবাদী করোনা ভাইরাসকেও মানুষ পরাস্ত করবে, আমাদের বিজ্ঞানীরা খুব শীঘ্রই করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে আমাদের পৃথিবীকে এই দুর্যোগ থেকে মুক্ত করবেন। পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মহামারী রূপ নেওয়া করোনা ভাইরাস। আমাদের পৃথিবী আবার আমাদের হয়ে ওঠবে। ততদিন পর্যন্ত আমাদের সবাইকে ধৈর্য্ভ ধরে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। 

ভয়ংকর এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ও নিরাপদ থাকতে করণীয় সম্পর্কে তোমরা নিশ্চয়ই এতদিনে জেনে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া পরামর্শ ও নির্দেশনাগুলো আমাদের যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। আমাদের সরকার থেকে যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে নৈতিক দায়িত্ব এবং নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে সেগুলো পালন করতে হবে। তোমরা যারা শিক্ষার্থী তোমোদর এ বিষয়ে দায়িত্ব অনেক। জরুরি প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার সরকারি নির্দেশনা আমাদের অবশ্যম্ভাবী পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে খুব জরুরি না হলে ঘরের বাইরে কোথাও বের হওয়া যাবে না। বাইরে বেরুলে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। একজনের চেয়ে আরকেজনের মধ্যে দূরত্ব কমপক্ষে ৩ ফুট রাখতে হবে। সাবান-পানি দিয়ে বার বার হাত ধৌত করতে হবে। বাসা-বাড়িতে আমরা অনেকেই নির্দিষ্ট প্লেট, গ্লাস ব্যবহার করি । এখন এটা সবাই করতে পারলে খুব ভালো হবে। ছোঁয়াচে এই রোগ থেকে বাঁচতে আমরা নিজেদের হাত আগলে রাখব, চোখে-মুখে হাতের স্পর্শ পরিহার করব। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমক্ত করব। যতদূর সম্ভব আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকব। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার কোন বিকল্প নাই। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি করোনার ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা তত বেশি। এজন্যে সুষম খাবার খেতে হবে, বিশেষ করে বেশি করে প্রেটিন সমৃদ্ধ খাদ্য, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাই এগুলো বেশি করে খেতে হবে। বাড়িতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ঘুমোতে হবে। সেইসাথে নিজ নিজ ধর্মীয় আচারগুলো যথাযথভাবে পালন করতে পারো। 

ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছে না বলে কোনভাবেই বাইরে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে-আড্ডা দেয়া যাবে না। বসে বসে সময় না কাটলে সিলেবাসের পড়াগুলো শেষ করে ফেলতে পারো। সংসদ টিভিতে নির্দিষ্ট রুটিন মাফিক ডিজিটাল ক্লাস হচ্ছে, তোমরা প্রতিদিন সেটাতে অংশগ্রহণ করো। হোমওয়ার্কগুলো শেষ করে ফেলো। এই ক্লাসের বিষয়টা তোমাদের যেসব বন্ধু এখনো জানে না তাদের ফোন/মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দাও। অবসর সময়ের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী বলা হয় গ্রন্থকে। বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বইগুলো এই সময়ে পড়ে ফেলতে পারো। সংগ্রহে না থাকলে ইন্টারনেট থেকে পিডিএফ কিংবা ই-বুক আকারে ডাউনলোড করতে পারো। ছবি আঁকা, গানের চর্চ্চা, কবিতা আবৃত্তি প্রভৃতি সৃজনশীল কাজগুলো করার উপযুক্ত সময় এখনই। গান শোনা, ইউটিউবে মজার মজার শিক্ষণীয় ভিডিও টিউটোরিয়াল কিংবা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুভিগুলো দেখে ফেলতেও পারো এই সময়ে। যাই করো, কোন অবস্থাতে কোন অযুহাতেই ঘরের বাইরে বের হবে না। 

মনে রাখতে একটাই জীবন। তোমাদের স্বপ্নগুলোকে সত্যিতে পরিণত করতে হলে বেঁচে থাকতে হবে। এ জীবনকে বর্তমান ভয়ংকর পরিস্থিতিতে কোন হেলাফেলার মাধ্যমে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা যাবে না। সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ হবে, অন্যকে সচেতন করতে হবে। খুব শীঘ্রই তোমরা স্কুল ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে, আবার আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তোমাদের পবিত্র স্পর্শে মুখরিত হয়ে ওঠবে এই প্রত্যাশা করি। 

লেখক: কাজল কান্তি দাস, সিনিয়র শিক্ষক, ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *