_
ফারহান মাসউদ আফছর, গোলাপগঞ্জ :
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ও শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা তীরবর্তী দুইটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক কটলিপাড়া-বসন্তপুর রাস্তা।এই রাস্তাটি সম্পুর্ণভাবে পাকাকরণ এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি। রাস্তা পাকাকরণ না হওয়াতে বর্তমানে বৃষ্টির দিনে এই রাস্তার একাংশ বেহাল দশায় পতিত হয়েছে। ফলে রাস্তাটিতে সাধারণ মানুষের পায়ে হেঁটে চলাচল করাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আর যানবাহন চলাচল দুস্কর। এলাকাবাসীর মতে, এই সড়ক ভয়ংকর।
জানা যায়, কুশিয়ারা পাড়ের মানুষের বিশেষ করে বাদেপাশা ইউনিয়ের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র পথ হচ্ছে এই রাস্তা। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই রাস্তার সম্পূর্ণ পাকাকরণ। কিন্তুু ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসলে রাস্তাটির অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং যথারীতি বুধবারীবাজার ইউনিয়নের কটলিপাড়া থেকে শুরু করে বাদেপাশা ইউনিয়নের মোল্লাকোণা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তার পিচঢালাই সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু এর পরেই থমকে যায় রাস্তাটির সংস্কারের কাজ। যার ফলে ক্ষোভে ফুঁসছেন এই অঞ্চলের মানুষজন। তাদের দাবী দীর্ঘদিন থেকে কটলিপাড়া-বসন্তপুর রাস্তাটি কয়েক কিলোমিটার সংস্কার করা হলেও এখন পর্যন্ত শতভাগ পিচঢালা সম্ভব হয়নি। বাকি অংশের কাজ না হওয়াতে একদিকে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন – অন্যদিকে রাস্তার ভয়াবহ অচলাবস্থায় ভোগান্তিতে পড়ে এলাকাবাসী। রাস্তাটির বেহাল অবস্থায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র এই রাস্তাটি জনসাধারণের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন স্কুল- কলেজের ছাত্র- ছাত্রীর চলাচল,অফিস আদালতে যাতায়াত,১০ নং উত্তর বাদেপাশা ইউনিয়নের উত্তর অংশের বেশিরভাগ এলাকার জনগণ নাগরিক সেবা নিতে ইউনিয়ন অফিসে যাতায়াতে বিঘ্নতা দেখা দেয়।
খোজ নিয়ে জানা যায় পরবর্তীতে জনসাধারণের চরম দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বৃহত্তর বাগলা এলাকার যুব সমাজের উদ্দ্যোগে,জেলাপরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের এলজি এসপি বরাদ্দ থেকে ও এই এলাকার দেশ- বিদেশে অবস্থানরত সমাজের বিত্তবানদের আর্থিক সহযোগিতায় এবং এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘর থেকে চাঁদা তুলে ৩ বৎসর পূর্বে আনুমানিক ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মুল্লারচক পিছের মুখ থেকে বাগলা বাজার পযর্ন্ত ইট সলিং এর কাজ করানো হয়।কিন্তু নদী ভাঙন এবং ভারী যানবাহন চলাচলের কারনে রাস্তাটি দিন দিন নদীগর্ভে বিলীন ও চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়ে।বর্তমানে ভারী বর্ষণে কাদামাটির কারনে রাস্তা দিয়ে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে অথচ কুশিয়ারা পাড়ের একমাত্র এ যোগাযোগ মাধ্যমটি হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই অঞ্চলের সাধারন মানুষের প্রাণের দাবী যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটি সম্পূর্ণ পাকাকরণ করে জনদুর্ভোগ যেন লাঘব করা হয়। সিএনজি চালক লিটু জানান, সড়কটি ভয়ংকর। তিনি বলেন, প্রতিদিন অন্তত চার-পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ি উল্টে যায়, হাত-পা ভাঙে। রাস্তাটির বেহাল অবস্থা হওয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বাদেপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা সমাজকর্মি আব্দুস সামাদ বলেন সিলেট-০৬ আসনের নির্বাচিত সংসদ বাংলাদেশ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী জননেতা, নুরুল ইসলাম নাহিদ এম.পি মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কটলীপাড়া- বসন্তপুর আঞ্চলিক সড়ক এর পাকা করনের কাজ বুধবারী বাজার ইউনিয় থেকে শুরু করেছিলেন। ধাপে ধাপে ১০ নং উত্তর বাদেপাশা ইউনিয়নের পিছের কাজ মুল্লারচক পর্যন্ত এসে শেষ হয়ে যায়।
দুঃখ জনক হলেও সত্য এই এলাকার মানুষজনকে কিছু দিন পরপর এই রাস্তা নিয়ে স্বপ্ন দেখে বার বার আশাহত হয়। গত বছর গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অফিসের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ পিছের মুখ হইতে বাগলা বাজার হয়ে বাগলা মাইজপাড়া খেলার মাঠের সম্মুখ পযর্ন্ত রাস্তা পাকা করনের জন্য মাপ-জোখ করেন এবং সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাস্তার কাজ খুব দ্রুত টেন্ডার প্রক্রিয়াতে যাবে এবং কাজ শুরু হবে বলে এলাকার জনগণ আশ্বস্ত হয়েছিলেন কিন্তু বিধি বাম এখনও আমরা অপেক্ষমান।তিনি আরো বলেন আমাদের দাবী নয় আমাদের ন্যায্য অধিকার রাস্তাটাতে অতন্ত কংক্রিট দিয়ে চলাচলের উপযোগী করে দেন যাতে করে সাময়িক এর জন্য আমরা চলাচল করতে পারি। আব্দুস সামাদ আরো বলেন,কটিলপাড়া-বসন্তপুর রাস্তাটি আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি এখন মরণফাঁদ। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের যানবাহন উল্টে পড়ে যায়, রাস্তার কাঁদায় নষ্ট হয় তাদের পোশাক।’ আর বর্তমানে বৃষ্টির দিনে গাড়ি চলা চলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাদেপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ জানান, এই রাস্তা কুশিয়ারা পাড়ের মানুষের প্রাণের দাবি।রাস্তাটি পাকাকরণ না হওয়াতে এটি জনসাধারণের চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ছে।এই সরকারের আমলে সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ এর প্রচেষ্টায় বুধবারিবাজারের কটলিপাড়া থেক বাদেপাশার মোল্লারচক পর্যন্ত পিচডালাই হয়েছে কিন্তু বাকি অংশ এখনো হয়নি।এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা বিধায়, রাস্তাটির বাকি অংশ পাকাকরণের জোর দাবি জানাচ্ছি।এছাড়া তিনি আরো বলেন এই রাস্তা পাকাকরণ হলে যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে মৌলভীবাজার টু বড়লেখা এবং বড়লেখা টু সিলেট এর যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী দিক সূচিত হবে।
শরিফগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর সভাপতি মাস্টার লুৎফুর রহমান লুতি এর সিথে আলাপচারিতায় তিনি বলেন আমার বয়স হয়েছে ৭২বছর আমি আমার ছোটবেলা থেকে কটলিপাড়া বসন্তপুর রাস্তা সম্পর্কে জেনে আসছি এবং স্বপ্ন দেখছি যে এই রাস্তা পাকাকরণ হবে এবং আমরা হাকালুকি হাওর পাড়ের মানুষের জীবনমানে পরিবর্তন আসবে।কিন্তুু আজ অবধি স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। তবে একটা কথা বলা বাহুল্য ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় তখন আমাদের মাননীয় সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই রাস্তা পাকাকরণের উদ্যোগ নেন এবং কার্যক্রম অনেকটা এগিয়ে নেওয়া হয় কিন্তুু পরবর্তীকালে সরকার পরিবর্তনের ফলে সবকিছু থেমে যায়। তবে বর্তমান সরকারের আমলে এই রাস্তার পাকাকরণের কাজ অনেকটা এগিয়ে যায় এবং আশা করি অতিদ্রুত
বাকি অংশ পাকাকরণ হবে। বিশেষ করে আমার শরিফগঞ্জ ইউনিয়ের বাকী অংশ পাকাকরণ হলে আমরা শরিফগঞ্জবাসী কৃতজ্ঞ থাকব।
শরিফগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ মুমিত হিরা এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি হাওর বেষ্টিত এই জনপদের সড়ক যোগাযোগ এর একমাত্র রাস্তা হলো কটলিপাড়া বসন্তপুর রাস্তা। জনগণের যোগাযোগের একমাত্র এই রাস্তাটি পাকাকরণ হলে জনদুর্ভোগ লাগব হবে পাশাপাশি তিনটি উপজেলার জনগণের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হবে।বিশেষ করে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ফেঞ্চুগঞ্জ অংশের জুড়ি নদীর উপর প্রস্তাবিত সেতু বাস্তবায়ন হলে এই রাস্তার মাধ্যমে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এর বড়লেখার মধ্যে আন্তযোগাযোগ স্থাপনে এক যুগান্তকারী দিক উন্মোচিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি দ্রুত পাকাকরণের করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাছান বলেন, বাগলা খেলার মাঠ পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের জন্য শ্রীগ্রই প্রস্তাবনা পাঠানো হবে অনুমোদনের সাপেক্ষে ও টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আশা করি আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে এই সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু হবে । পার্যায়ক্রমে রাস্তার বাকি অংশ পাকাকরণ হবে।