এই ‘বাংলাদেশ’ নামটাও কিন্তু জাতির পিতার দেওয়া: প্রধানমন্ত্রী

Top News

এই ‘বাংলাদেশ’ নামটাও কিন্তু জাতির পিতার দেওয়া: প্রধানমন্ত্রীবঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই বাংলাদেশ নাম, এই নামটাও কিন্তু জাতির পিতার দেওয়া। ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের মৃত্যু দিবসে তিনি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি পূর্ব বঙ্গের নাম যে বাংলাদেশ হবে এই ঘোষাণাটা দেন।’


মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ট্রাজেডির কথা স্মরণ করে আক্ষেপের সুরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত বড় একটা ঘটনা বাংলাদেশের কি কেউ বা কোনো লোক জানতে পারলো না, কোনো পদক্ষেপ নিলো না, কেন ওই লাশ পড়ে থাকল ৩২ নম্বরে? সে উত্তর এখনো আমি পাইনি। এত বড় সংগঠন, এত নেতা কোথায় ছিল? মাঝে মাঝে আমার এটা জানতে ইচ্ছে করে, কেউ সাহসে ভর দিয়ে এগিয়ে এলো না কেন?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তো শেখ মুজিবের সঙ্গে ছিল। এই ব্যর্থতার খেসারত দিয়ে হয়েছে জাতিকে। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এ দেশে বারবার ক্যু হয়েছে। ১৮-১৯টা ক্যু হয়েছে এই দেশে। অত্যাচার নির্যাতন চলেছে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর।’
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জাতির পিতাকে জড়ানোর উদ্দেশ্যটাই ছিল তাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা, তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রমাণ করা। কারণ তিনি পূর্ববঙ্গকে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীন করতে চেয়েছেন। সেই অপরাধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। কিন্ত বাংলাদেশে আমাদের ছাত্রসমাজ দল-মত নির্বিশেষ অন্দোলন গড়ে তুলেন। মে মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আর জুন মাসেই হরতাল হয়েছে। শ্রমিক নেতা নুরু মিয়াসহ ১১ জন তখন প্রাণ দেন। ৬৮ সাল থেকে এই আন্দোলন আরও বেগবান হয়, আর ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ছয় দফাকে বানচাল করতে তারা অনেক কিছু নিয়ে আসে। তারা ছয় দফাকে আট দফা করে ফেলে। আমাদের দুর্ভাগ্য আওয়ামী লীগের তৎকালীন হোমরা-চোমড়া অনেক নেতা আট দফার দিকে ঝুঁকেও গিয়েছিলেন। কারাগারের রোজনামচাটা পড়লে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। আমাদের সঙ্গেও অনেক নেতাদের তর্ক হতো। অনেকে বলতেন, তুমি, মেয়ে কিচ্ছু বোঝো না। আমি ইউনিভিার্সিটির ছাত্রী কিছু বুঝবো না সেটাতো হয় না। আমি স্কুলজীবন থেকে মিছিলে যাওয়া শুরু করেছি, কলেজে ভিপি ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও কিছুই বুঝব না এটাতো হয় না। আসলেই তারাই বুঝতেন না।’
‘এরকম বহু ঘটনা ঘটে, এটা স্বাভাবিক। কারণ তাৎক্ষণিক কিছু পাওয়ার জন্য অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এজেন্সি দ্বারা পরিচালিত হন। কিন্তু জাতির পিতা তার প্রতিটা পদক্ষেপ নিয়েছেন ভেবেচিন্তে। তিনি কারও প্ররোচনায় পড়েননি। জীবনে অনেক ঝুঁকি তিনি নিয়েছেন। যুদ্ধের পরবর্তী সব প্ল্যান তিনি প্রবাসে করে আসেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অসহযোগ আন্দোলন যখন শুরু হলো, ইয়াহিয়াকে খাবার রান্না করে দেবার লোক পর্যন্ত ছিল না। কারণ সবাই স্ট্রাইক করেছে তাকে খেতে দেবে না। তখন ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বারে ফোন আসে যেন তাদেরকে রান্না করে খেতে দেওয়া হয়। এর মানে পুরো জাতিকে তিনি একটি বিপ্লবের দিকে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। সবাই যার যার জায়গা থেকে দেশকে স্বাধীন করতে জীবন বাজি রেখেছে। অসহযোগ আন্দোলন থেকে একটি সশস্ত্র বিপ্লবের দিকে একটি জাতিকে একমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানই নিয়ে যেতে পেরেছেন।’
স্বাধীনতাবিরোধীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তার ৭ মার্চের ভাষণ এক সময় এই দেশে নিষিদ্ধই করা ছিল। আজকে সারাবিশ্বে আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে জাতির পিতার ভাষণ সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে ইউনেস্কোর প্রামাণ্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে। আমি জানি না জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা এই ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল তারা লজ্জা পায় কি না? অনেকেই জাতির পিতার ভাষণ দেশে ছড়িয়ে দেয়। এটা করতে গিয়েও অনেক শহীদ হয়েছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন। কেউ একজন জাতির পিতার নির্দেশে রেডিওতে প্রচার করলে অনেকেই তাকে স্বাধীনতার ঘোষক পর্যন্ত বানানোর চেষ্টা করলেন। ইতিহাস সত্যের সন্ধান করে, সত্যই টিকে থাকে, মিথ্যা টিকে থাকে না।’

Facebooktwittergoogle_plusredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *