করোনা সমগ্র বিশ্বকে থমকে দিয়েছে।আজ সবাই স্বাধীন জগতে নিজ ইচ্ছাতেই পরাধীন।করোনা কে নিয়ে কবি সাহিত্যিক ও লেখকদের ও ভাবনা ভিন্ন।কেউবা বলছেন করোনা আমাদের নতুন করে ভাবতে শিখাচ্ছে আবার কেউবা বলছেন প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।আবার কেউবা বলছেন অনেক হয়েছে এবার বিদায় নে।তেমনি এক ভিন্ন আঙ্গিকের রম্যরসিক ও বাস্তবাবিক চিঠি লিখেছেন লেখক ও সাংবাদিক প্রবাসী বঙ্গালী ফারজানা চৌধুরী পাপড়ি যা নিচে তুলে ধরা হলো।
অপ্রিয় করোনা,
আমাদের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি রইল একরাশ ঘৃণা ও গোলাপ গাছের মধ্যে যেসব কাটা থাকে ঐসব কাটার শুভেচ্ছা। কেমন আছ, বিরক্ত হচ্ছে না তো? ঘৃণা ও কাটার আঘাত যে তোমাকে আজ অসহায় ও করে তুলতে পারবে, তোমার নাম শুনার আগ পর্যন্তও আমাদের জানা ছিলনা। আশা করি খুব একটা ভাল নেই। জানি তুমি এখন বিরহ জ্বালায় ভুগছো। কারণ এত ঘৃণা সইবেই বা কেমন করে।
করোনা,
তোমার উন্মদ,পাগলামী ,বদনামী ভালবাসা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়-খাড় করে ফেলেছে আমাদের ভেতর, আমাদের বাহির। আমাদেরই হাতে গড়া আমাদের পৃথিবী। দেশের পর দেশ তছনছ করে দিচ্ছ তুমি। বলা যায় এক অস্বাভাবিক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি, সবকিছু ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। আজ তোমার জন্য হাজার হাজার মানুষ মরছে। চায়না থেকে আমেরিকা, লন্ডন আরো অনেক দেশ অতিক্রম করে এখন পাড়ি দিয়েছো গরীব বাংলাদেশে। তোমার জন্য আজ আমরা ঘরবন্দি,পরাধীন। স্যোশাল ডিস্টেন্সিং বা সামাজিক দূরত্ব মানতে গিয়ে আড্ডা দূরে থাক একান্ত প্রয়োজনেও কেউ কারো সাথে দেখা করতে পারছি না। বলা যায়, সমাজজীবনে এক অন্যরকম কারফিউ এনে দিয়েছ। কখন যে স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসবে? আদৌ কি আর আগের মতো হাসি-ঠাট্টা, আনন্দ-আড্ডায় যখন তখন মেতে ওঠা যাবে? অনেক কিছুর সাথে এই প্রশ্নগুলো মনের মধ্যে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে শুধুমাত্র তোমার জন্য। তাইতো আমরা তোমার নাম রেখেছি মহামারী,গজব ইত্যাদি।
আজ তোমার অত্যাচারের পরও কিন্তু আমাদের জীবন থেমে নেই। জীবন নির্বাহ করতে মানুষকে বাধ্য হয়ে ভিন্ন নানা মাধ্যমের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। সুখ, দু:খ নিয়েই যে মানবজীবন। তাই অফুরন্ত এই অবসর কাটাতে বিভিন্নজনের রয়েছে বিভিন্ন পরিকল্পনা। চলছে নানা ধরনের আড্ডাও। সরাসরি না হলেও অনলাইন আড্ডায় কাটছে অনেকের গৃহবন্দী, কর্মহীন সময়। আর এই সুযোগ করে দিয়েছে জুম, গুগল, ফেইসবুক লাইভ রুম, ম্যাসেঞ্জার, ওয়াটসঅ্যাপ বা ইমো ইন্টারনেট অ্যাপস। মানুষের চাহিদার কথা ভেবে গ্রুপ ভিডিও চ্যাটের নতুন নতুন অ্যাপস উদ্ভাবনও হচ্ছে। স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসার আগ পর্যন্ত হয়তো জীবনটা ভার্চুয়াল কেন্দ্রীকই থাকবে। কিন্তু সরাসরি পাশাপাশি বসে চা, কফি কিংবা চানা-পিয়াজু চিবুতে চিবুতে যে আড্ডা সেটার কি কোনো তুলনা হয়? অবশ্যই না।
করোনা,
আমাদেরকে তুমি ক্ষমা করে দাও। বিশ্বাস করো তোমার জন্য সারা বিশ্ব আজ আতংকিত। আজ আমরা ভাল মানুষ হয়ে গেছি।তোমার জন্য সবকিছু বদলে গেছে।আমাদের মধ্যে অনেক বৈষম্য ছিল যেমন ধর্ম,বর্ণ, জাত, সাম্প্রদায়িক ক্ষমতা। এখন আমরা সবাই এক হয়ে গেছি। বিশ্বাস করো এখন আমাদের রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধ নেই, হামলা নেই। আমরা এখন এক হয়ে বাঁচতে চাই।
করোনা,
আমরা জানি তুমি অতি ক্ষুদ্র একটি স্বত্ত্বা। আল্লাহ তোমাকে ক্ষমতা দিয়েছেন অপরিসীম। আমাদের যেমন জন্ম হয়েছে তেমন মৃত্যু অনিবার্য ঠিক তেমনি আমরাও বিশ্বাস করি তোমার শুরু যেমন হয়েছে শেষ ও তেমনি অনিবার্য।
আজ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।তোমাকে লিখছি চোখের পানিও যেন থামাতে পারছি না।তোমার মৃত্যু কামনা করে ইতি টানলাম।
তোমারই
“আমরা আমজনতা”